শুক্রবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এক ওয়েবিনারে (অন-লাইন সেমিনার) জাতীয় সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে যেকোন প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশগত প্রভাব যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট আইনী বাধ্যবাধকতা মানার ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তায়ন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু তাই নয়, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে যে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয় তা হাস্যকর। বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে মানবাধিকার রক্ষা, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই নিশ্চিত করা হচ্ছে না। যেহেতু ব্যাবসায়ীরা রাষ্ট্র পরিচালনা করছে তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশীয় এবং বহুজাতিক কোম্পানী মুনাফাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে, রাষ্ট্রের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী ও শিশুর অধিকার নিশ্চিত করছে না।
প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চ – এলএনএসপি এই সেমিনারের আয়োজন করে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মানবাধিকার সংরক্ষণে জাতিসংঘের আইনী বাধ্যবাধকতামূলক চুক্তি শীর্ষক এই সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ব্যরিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। আলোচনায় অংশ নেন ইউএন হিউম্যান রাইটস সিনিয়র এডভাইজার হাইকি আলেফসন, টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, একশন এইড ইন্টারন্যাশনাল-এর মেরি ওয়ানদিয়া, একশনএইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর আসগর আলী সাবরি, প্রোগ্রাম ম্যানেজার শমসের আলী। তৃণমূল পর্যায়ের পরামর্শ তুলে ধরেন খালিদ পাশা জয়, স্বাগত বক্তব্য বলেন অপরাজিতা সঙ্গীতা এবং সমাপনী বক্তব্য বলেন গৌরাঙ্গ নন্দী।
মেরি ওয়ানদিয়া বলেন, পৃথিবীর উত্তরের বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর বহু রাষ্ট্রই এই চুক্তি প্রক্রিয়ায় যেতে আগ্রহী নন যেহেতু সিংহভাগ বহুজাতিক কোম্পানির সেসকল রাষ্ট্রে অবস্থিত। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এর আপত্তি এ কারণে যে, এই চুক্তি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে কেবল বহুজাতিক কোম্পানিকেই দায়বদ্ধ করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় অধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। যেমন বহুজাতিক কোম্পানির একটা অংশ চীন রাষ্ট্রীয় অধীন, যারা এই চুক্তির আওতাভুক্ত হবেন না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবনা হচ্ছে এই চুক্তি প্রক্রিয়ায় সকল করপোরেশনকেই আওতাভুক্ত করতে হবে। এখন পর্যন্ত এই বিষয়টি চুক্তি প্রক্রিয়ায় বিতর্কের জায়গা হিসেবেই রয়েছে। মেরি ওয়ানদিয়া আরো বলেন, কেবল দেশীয় পর্যায়েই নয়, আন্তর্জাতিক বহুপাক্ষিক অবস্থানের পরিসরেও নাগরিক সমাজের জায়গা সঙ্কুচিত হচ্ছে, কেননা এই চুক্তি প্রক্রিয়ায় নাগরিক সুশীল সমাজের অংগ্রহণ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন মিশর, চীন এবং রাশিয়ার মতন রাষ্ট্রসমূহ। লক্ষণীয় এই যে, নাগরিক সুশীল সমাজের অংশগ্রহণকারীরা ভুক্তভোগীর হয়ে অংশ নিচ্ছেন। এই ক্ষেত্রে নাগরিক সুশীল সমাজের ভুমিকা হবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক সভার আয়োজনের ভেতর দিয়ে নীতি পরামর্শ প্রস্তুত করে আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরা।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সিনিয়র এডভাইজার হাইকি আলেফসন বলেন, বাধ্যতামূলক চুক্তির বিষয়ে এলএনএসপি’র উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মতামত সংগ্রহ করে তা তুলে ধরার প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেছেন, মানবাধিকার সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন সহ চুক্তিকে বৃহত্তর আঙ্গিকে দেখা এবং সরকার শুধু না সব ধরনের অংশীজনকে অন্তর্ভুক্ত করে কর্পোরেট সহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সরকারকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে এলএনএসপিকে উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শুধু এ ধরনের চুক্তি নয়, তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং সুশীল সমাজ ও অন্যতম অংশীদার কর্পোরেট খাতকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন বাংলাদেশের করপোরেট খাতকেও এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করতে হবে, তা না হলে সামগ্রিকভাবে কোন সুফল বয়ে আনবে না। তিনি আরো বলেন, বাধ্যতামূলক চুক্তির ধারা ৬ এ জবাবদিহিতা নিশ্চিতে দায়ী প্রতিষ্ঠান হতে ক্ষতিপূরণ এবং সম্পদ পুন:রুদ্ধারে ফৌজদারি এবং দেওয়ানী উভয় ধরনের আইনী প্রতিকারের বিধান থাকতে হবে।
শমশের আলী বলেন আন্তর্জাতিক পরিসরে নীতিপরামর্শ উপস্থাপনের পূর্বে চুক্তি প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্ট মহলকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মতামত গ্রহণে গুরুত্ব দিতে হবে। এই চুক্তির বিষয়টি উপকূল নিকটবর্তী প্রান্তিক মানুষ কিংবা গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী দরিদ্র্য মানুষ, নারী এবং শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রমের কারণে তারা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি