শিশুদের কবরস্থান হতে যাচ্ছে গাজা: জাতিসংঘ
জন্মভূমি ডেস্ক : ইসরাইলের চলমান হামলায় গাজায় মানবিক বিপর্যয় হয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ শতায়েহের সোমবার সাপ্তাহিক মন্ত্রিসভার বৈঠকে মিলিত হন; এতে শিশু ও মানুষ হত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে। বৈঠক শেষ হওয়ামাত্র মূল বিষয়গুলো মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা তুলে ধরেছে।
খবরে বলা হয়েছে, মানুষের সহ্যের বাইরে গাজার দৃশ্য। শিশুরা বোমা, ক্ষুধা ও ভয়ে নিহত হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সে সরাসরি বোমা হামলা করা হচ্ছে। বিধ্বস্ত গাজায় বিদ্যুৎ ও পানির প্রয়োজন। ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা জীবিতদের খোঁজে বের করতে হামলা থামাতে হবে।
গাজাকে যে আগ্রাসন রক্তের উপত্যকায় পরিণত করেছে তা বন্ধ করতে বিবেকবান এবং মানবিক মূল্যবোধের সমর্থকদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইসরাইলের ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী খিলা আইল্যান্ড বলেন, তারা অবশ্যই গাজায় একটি মানবিক সংকট তৈরি করবে; যাতে এটি মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
১০ হাজার নিহত, ২৪ হাজারের বেশি আহত এবং এক মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত। এতেও নাকি ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী সন্তুষ্ট নন বলে সাপ্তাহিক মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ কথা বলা হয়েছে। বৈঠকে আরও বলা হয়েছে, ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী গাজাকে হিরোশিমার আদলে দেখতে চান। ইসরাইলের কাছে থাকা পারমাণবিক বোমা দিয়ে গণহত্যার দৃশ্য দেখতে চায়।
ইসরাইলের আকাশ থেকে বোমা হামলা আরও তীব্র হওয়ার পর জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ সতর্কবার্তা উচ্চারণ কওে বলেছেন শিশুদের জন্য গাজা কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিটি ঘণ্টায় মানবিক যুদ্ধবিরতি অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে জাতিসংঘের এজেন্সিগুলো গাজা ও ইসরাইলে বেসামরিক লোকজন হত্যাকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে। ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
ওদিকে ৭ই অক্টোবর থেকে গাজায় নিহতের সংখ্যা ১০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। এ সংখ্যা এখন কমপক্ষে ১০,০২২। এর মধ্যে কমপক্ষে ৪,১০৪টি শিশু আছে। বেসামরিক লোকজনকে টার্গেট না করে যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসকে টার্গেট করে হামলা চালানোর কথা বলেছে ইসরাইল। কিন্তু এতগুলো নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যু কী তাদের সেই দাবির পক্ষে যথার্থ! প্রতিদিন যেভাবে গাজাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে, হামলায় হাত-পা ভেঙে যাওয়া রক্তাক্ত শিশুকে যখন জবাই করার মুরগির মতো থর থর করে কাঁপতে দেখা যায়, অসহায়ের মতো তাকিয়ে ভয়ে তাদের চোখ বিস্ফারিত- তখন কোন যুক্তিতে এই হামলার পক্ষে সাফাই গাওয়া যায়! ঠিক এমন সময়ে দম্ভ করে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবিসি নিউজকে বলেছেন, যুদ্ধ যখন শেষ হয়ে যাবে তখন গাজার পুরো নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে নেবে ইসরাইল। তার এই কথা যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ।
নেতানিয়াহু বলেছেন, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য গাজা উপত্যকার সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে নেবে ইসরাইল।
ওদিকে সোমবার ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ২৪ ঘন্টায় হামাসের ৪৫০টি টার্গেটে হামলা করেছে। এর মধ্যে আছে ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী লঞ্চ প্যাড। অনলাইন আল জাজিরা বলছে, জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি রিয়াদ মানসুর ইসরাইলের ক্রাইমের জন্য তাদের জবাবদিহিতা দাবি করেছেন। জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির চুক্তি আটকে দেয়ার জন্য তিনি দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রকে।
ওদিকে গাজায় রেডক্রিসেন্ট জরুরি সহায়তার আপিল জানিয়েছে। তারা বলেছে, গাজায় আল কুদস হাসপাতাল এবং আল আওদা হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যেতে পারে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে।
রোববার মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সাবমেরিন। এটি একটি গাইডেড মিসাইল সাবমেরিন। পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপের সক্ষমতা নেই তার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এ কথা জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। সোমবার পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি প্যাট রাইডার বলেন, ওহাইও-শ্রেণির এই সাবমেরিনটি ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রশস্ত্র সুরক্ষায় সহায়ক সমর্থন দেবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সাবমেরিনটির একটি ছবি প্রকাশ করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাতে দেখা যায়, লোহিত সাগরের সুয়েজ ক্যানাল দিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তা।