জন্মভূমি ডেস্ক : বিদেশি ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাবরই গতি কম থাকছে। এ নিয়ে নানা সময় আলোচনা হলেও, পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। সম্প্রতি বিদেশি ঋণের প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিদেশি ঋণের প্রকল্পে অর্থ ছাড় দ্রুত করতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দুই প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া। প্রথমটি ছিল প্রস্তুতিমূলক প্রকল্প। এতে ৪৯১ দশমিক ৩০৯ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল দেশটি, যার চুক্তি হয় ২০১৩ সালে। পাঁচ বছর মেয়াদি ওই ঋণ গত অর্থবছর পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। আর মূল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই চুক্তি সই হয়। ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের এ ঋণের মাত্র ৫৩ শতাংশ ছাড় হয়েছে। তবে এ ঋণের সুদের হারে এরই মধ্যে চাপা পড়েছে বাংলাদেশ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, গত অর্থবছরের জুন পর্যন্ত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার ঋণ ছাড় হয় পাঁচ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। অবশিষ্ট ছিল পাঁচ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। তবে গত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এ ঋণের আরও ৫৪৪ দশমিক ১০ মিলিয়ন ছাড় হয়েছে। অর্থাৎ রাশিয়ার ঋণ অবশিষ্ট আছে চার দশমিক ৮৪৭ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪৩ শতাংশ। ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর। অর্থাৎ ২০২৬ সালের জুলাই থেকে ঋণের আসল পরিশোধ শুরু হবে।
রাশিয়ার ঋণের সুদহার ধরা হয়েছিল লাইবর+১.৭৫ শতাংশ। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে ঋণচুক্তি সইয়ের সময় লাইবর (লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেট) ছিল শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ ওই সময় রাশিয়ার ঋণের জন্য সুদ দিতে হতো দুই দশমিক ২৫ শতাংশ হারে। তবে বর্তমানে লাইবর বেড়ে হয়েছে পাঁচ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অর্থাৎ লাইবর প্রায় ১১ গুণ হয়ে গেছে। এতে রাশিয়ার ঋণের জন্য সুদ দিতে হবে সাত দশমিক ১৯ শতাংশ হারে।
এদিকে গত বছর থেকে বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে লাইবরের পরিবর্তে সুদের আন্তর্জাতিক হার সোফর (সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট) ব্যবহার করছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছর শেষে সোফর পাঁচ শতাংশ ছাড়ায়। বর্তমানে তা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ হার বিবেচনায় নিলেও রাশিয়ার ঋণের জন্য সুদ দিতে হবে সাত দশমিক ০৭ শতাংশ হারে। উচ্চ সুদ হারের কারণে গত অর্থবছর রাশিয়ার ছাড়কৃত ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশকে সুদ দিতে হয়েছে ৩২৯ দশমিক ৮৯১ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় তিন হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ সুদ পরিশোধ ব্যয় ৪০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, গ্রেস পিরিয়ড শেষে রাশিয়ার ঋণ পরিশোধ শুরু হবে ২০২৬-২৭ অর্থবছর থেকে, যা পরবর্তী ১০ বছরে শোধ করতে হবে। সে সময় সুদের পাশাপাশি আসল বাবদ প্রতি বছর আরও এক দশমিক ১৩৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। লাইবর বা সোফর সে সময় একই পর্যায়ে থাকলে শুধু রাশিয়াকেই বছরে দিতে হবে দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি। ইআরডির কর্মকর্তারা মনে করছেন, ওই সময় এক প্রকল্পই সরকারের বিদেশি ঋণ শোধে বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে।
প্রসঙ্গত, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তুতিমূলক প্রকল্পেও উচ্চ সুদে ঋণ দিয়েছিল রাশিয়া। এতে সুদহার ছিল লাইবর প্লাস ১ থেকে ৩ শতাংশ।