ঋতু বদলের সাথে সাথে প্রকৃতি রং বদলায়। হাজির হয় বৈচিত্র্য নিয়ে। প্রকৃতির বৈচিত্র্যের সাথে আমাদের মনেও অনেক বৈচিত্র্য আসে। সৌন্দর্যের তালিকায় শরতের আলাদা কদর রয়েছে। অন্য যে কোনো ঋতুর তুলনায় এই ঋতুর বৈশিষ্ট্য একটু ভিন্ন। সৃষ্টিশীল মানুষ নানাভাবে তুলে এনেছেন এই ঋতুকে। বারো মাস আর ছয় ঋতু- এইতো বাংলার প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য। বাংলা মায়ের নতুন নতুন রূপ তার সন্তানদের মুগ্ধ করে। তাইতো কবি বলেছেন, “তুমি এই অপরুপ রুপে, বাহির হলে জননী” ঋতুর পালাবদলে চলছে শরৎকাল। আকাশে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘমালা ওড়ে। ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ভাসতে থাকে সারাদিন। আবার কখনো মুখ গোমড়া হয়ে আসে আকাশের। শরৎ আসে মুলত মেঘ-রৌদ্রের লুকোচুরির ভেতর। কখনো ঝুম বৃষ্টি, কখনো কাঠফাটা রোদ্দুর। শরতের আকাশ কখনো ধোয়া-মোছা, পরিস্কার হয় না। সে তার নীলচে বুকে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের আবরণকে ঢেকে রাখতে চায়। এক কথায় স্বচ্ছ, নির্মল এক ঋতুর নাম শরৎ। শরৎ মূলত শুভ্রতার প্রতিক, পবিত্রতার চিত্ত। শরৎ মানেই নদীর তীরের কাঁশফুল, গাছে গাছে শিউলি, বেলি, জুই, শেফালি, মালতি, টগর, হাসনাহেনা, আর ঝিলে বিলে শাপলা ফুলের সমারোহ। সাথে পাকা তালের মিষ্টি ঘ্রাণ। তাল দিয়ে তৈরী করা পিঠা, পায়েস আর ক্ষেতে ক্ষেতে আমন ধানের বেড়ে ওঠা চারা। শরতের আকাশে যেন শুভ্রতার ফুল ঝরে। শারদসম্ভার নিয়ে তাই রচিত হয়েছে অনেক কবিতা, গল্প, গান, উপন্যাস ও প্রবন্ধ। চর্যাপদের পদকর্তা থেকে শুরু করে আজকের তরুণতম কবির রচনায় শরৎকাল তার নান্দনিক ব্যঞ্জনা নিয়ে উদ্ভাসিত। বৈষ্ণব সাহিত্যে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ভাদ্র মাসকে নিয়ে বৈষ্ণব পদাবলীর পদটি সম্ভবত বিদ্যাপতি রচিত রাধা বিরহের সর্বশ্রেষ্ঠ পদ। মহাকবি কালিদাসও শরৎ বন্দনায় ছিলেন অগ্রবর্তী। তিনি বলেন, প্রিয়তম আমার, ওই চেয়ে দেখ, নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত। কবি ঋতুসংহার কাব্যে শরৎকাল বিষয়ে লিখেছেন, ‘কাঁশ ফুলের মতন যার পরিধান, প্রফুল্ল পদ্মের মতো যার মুখ, উন্মুক্ত হাঁসের ডাকের মতন রমণীয় যার নূপুরের শব্দ, পাকা ধানের মতো সুন্দর যার ক্ষণি দেহলতা, অপরূপ যার আকৃতি সেই নববধূর মতো শরৎকাল আসে। প্রকৃতিপ্রেমী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও শরৎ নিয়ে প্রচুর কবিতা গান রচনার মধ্যে দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে সুবাসিত করেছেন। শরতের আকাশের ছেড়া ছেড়া সাদা মেঘের সাথে শৈশবের স্বপ্নরা ঘুরে বেড়ায়, উড়ে বেড়ায় রঙ বেরঙের ঘুড়ি। অপরূপ সৌন্দর্য্যরে কারণে শরৎকালকে বলা হয় ঋতু রাণী।