যশোর অফিস ও বেনাপোল প্রতিনিধি
যশোরের শার্শা উপজেলায় পুলিশ ও স্বর্ণ পাচারকারীদের মধ্য গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার জামতলা পাঁচপুকুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় একটি প্রাইভেট কারসহ দুই স্বর্ণ পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ৯ কেজি ৭৫৮ গ্রাম ওজনের ৩০টি স্বর্ণে বার উদ্ধার করা হয়। এদিকে ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরে মহাসড়কের পাশ থেকে মোটরসাইকেলসহ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তি স্বর্ণ পাচারকারীদের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। এ ছাড়া গোলাগুলির ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
পুলিশ জানায়, জামতলার পাঁচ পুকুর এলাকায় রাত ১২টার দিকে একটি তেল কোম্পানির ফ্যাক্টারির সামনে মহাসড়কের ওপর ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশ যৌথভাবে রাত্রিকালীন চেকপোস্ট চলছিল। এ সময় পুলিশ সন্দেজনকভাবে একটি প্রাইভেট কারসহ দুইজনকে (ঢাকা মেট্রো-গ ২২-০৪২৪) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রাইভেট কারে থাকা দুইজন স্বর্ণ পাচারকারী তাদের কাছে স্বর্ণ আছে বলে স্বীকার করেন।
এর কিছুক্ষণের মধ্যে মহাসড়কের দু’দিক হতে ২৫ থেকে ৩০টি মোটরসাইকেলে ৬০ থেকে ৭০ জন যুবক এসে পুলিশের ওপর হামলা করে প্রাইভেট কার ও স্বর্ণ পাচারকারীদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ করে কয়েকদফা ককটেল বোমা বিস্ফরণ ঘটায়। পুলিশও পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাল্টা গুলি ছোড়ে।
এ সময় দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে গেলে পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের শরীর ও প্রাইভেট কার তল্লাশি করে ৯ কজি ৭৫৮ গ্রাম ওজনের ৩০টি স্বর্নের বারসহ কুমিল্লার হোমনা উপজেলার আবুল সরকারের ছেলে রবিন (৩৫) ও দাউদকান্দি উপজেলার কবীর হোসেনের ছেলে আবুল কাশেম (৩৫) নামে দুই জনকে গ্রেফতার করে।
ঘটনাস্থল থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মিটার দূরে মহাসড়কের পাশে এক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে মোটরসাইকেলসহ আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। এ সময় আহত ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে গোলাগুলির ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের শরীরে স্প্রিন্টারের চিহ্ন রয়েছে। তারাও বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নাভারন সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান বলেন, নাভারন সাতক্ষীরা সড়কের জামতলা পাঁচপুকুর নামক স্থানে যশোর ডিবি ও শার্শা থানার পুলিশ যৌথ চেকপোস্ট চলছিল। এ সময় একটি প্রাইভেট কারসহ দুই স্বর্ণ পাচারকারীকে আটক করা হয়। আটক রবিনের শরীরে ও গাড়ির মধ্যে কৌশলে লুকিয়ে রাখা ৯ কেজি ৭৫৯ গ্রাম ওজনের ৩০ পিস স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। যার মুল্য আনুমানিক সাড়ে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পাচারকারীদের শার্শা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারাও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, মহাসড়কের পাশে আহত অবস্থায় পড়ে থাকা ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি মারা গেছেন। তবে তার শরীরে কোনো গুলির চিহ্ন নেই। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি পাচারকারীদের সঙ্গে জড়িত। নিহত ব্যক্তির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আমাদের যশোর অফিস জানায়, ডিবি পুলিশ জানায়, স্বর্ন উদ্ধারের সময় পুলিশ ও পাচারকারীদের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় অজ্ঞাত এক পাচারকারি নিহত হন।
\ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন \
যশোরের শার্শায় পুলিশ ও চোরাকারবারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় দুই চোরাকারবারীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে নয় কেজি ৭৫৮ গ্রাম সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। যশোরের ডিবি পুলিশ ও শার্শা থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার উপজেলার জামতলা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধারকৃত সোনার দাম সাত কোটি ৫৭ লাখ ১২ হাজার ৬শ’৮০ টাকা। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন ও একজন নিহত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন নাভারন সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান। আটককৃতরা হলেন, কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার সাতারদিয়া গ্রামের আবুল সরদারের ছেলে রবিন ও একই উপজেলার পাঁচগাছিয়া গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে আবুল কাশেম।
সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান আরও জানান, যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারের নির্দেশে, জামতলার পাঁচ পুকুর এলাকায় রাত সাড়ে ১১টার পর যশোর ডিবি পুলিশেরর ওসি রুপণ কুমার সরকার ও শার্শা থানা পুলিশের ওসি মামুন খান চেকপোষ্ট বসায়। এ সময় পুলিশ সন্দেজনকভাবে সাতক্ষীরা থেকে যশোর অভিমুখী আসা দ্রæতগামী একটি প্রাইভেট কারসহ দুইজনকে (ঢাকা মেট্রো-গ ২২-০৪২৪) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রাইভেট কারে থাকা দুইজন স্বর্ণ পাচারকারী তাদের কাছে স্বর্ণ আছে বলে স্বীকার করেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে মহাসড়কের দু’দিক থেকে ১০ থেকে ১৫টি মোটরসাইকেলে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক এসে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা করে প্রাইভেট কার ও স্বর্ণ পাচারকারীদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ করে কয়েকদফা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশও পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাল্টা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এক পর্যায় দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে গেলে পুলিশ আটকদের শরীর ও প্রাইভেট কার তল্লাশি করে ৯ কজি ৭৫৮ গ্রাম ওজনের ৩০টি স্বর্নের বার উদ্ধার করা হয়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে মহাসড়কের পাশে এক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে মোটরসাইকেলসহ আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে নিহত ব্যক্তির নাম ওলিয়ার ওরেফে ওলি মাকরা (৩৫)। তিনি বেনাপোলের রাজাপুর গ্রামের মৃত জাহান আলীর পুত্র। ঘটনাস্থল থেকে একটি প্রাইভেটকার, তিনটি মোটরসাইকেল ও ছয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শার্শা থানায় পৃথক দুইটি মামলা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, যশোরের ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার, শার্শা থানার ওসি মামুন খান, ডিবির পুলিশের পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম হাওলাদার, এসআই শামীম হোসেন প্রমুখ।
শার্শায় স্বর্ণ পাচারকারীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি, নিহত ১
Leave a comment