* তালিকায় একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরিজীবীরা রয়েছেন
* উপজেলা পর্যায়ের শিল্পীরা আবেদন করতে পারলেও জেলা পর্যায়ের শিল্পীরা জানেন না খবর
অভিজিৎ পাল
খুলনায় দুঃস্থ অসহায়, প্রান্তিক, কর্মহীন শিল্পী, কলাকুশলি ও সাহিত্যকদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের সহায়তা প্রদান প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিল্পকলা একাডেমির সদস্য, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা শিল্পী, কলাকুশলি ও সাহিত্যিকরা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রবিবার এ বিষয়ে ৫০ এর অধিক শিল্পী, কলাকুশলি ও সাহিত্যিকরা শিল্পিকলা একাডেমির খুলনা জেলা কার্যালয়ে জড়ো হয়ে কথা বলেন জেলা কালাচারাল অফিসার ও জেলা প্রশাসকের সাথেও।
গত ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার খুলনায় ২৯৭ জন দুঃস্থ অসহায়, প্রান্তিক, কর্মহীন শিল্পী, কলাকুশলি, সাহিত্যিকদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে প্রকৃত কর্মহীন শিল্পী, কলাকুশলি ও সাহিত্যিক এবং নাট্যব্যক্তিত্বদের বাদ দিয়ে এই তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমী বলছে শিল্পী, কলাকুশলি ও সাহিত্যিকদের ডাটাবেজ না থাকায় তাদের সংগঠনদের মাধ্যমে এটি করা হয়েছে। যার কারণে তথ্য পেতে সমস্যা হতে পারে। আর যারা বাদ পড়েছেন তাদের পুনরায় আবেদন করার কথা বলছেন জেলা প্রশাসক।
খুলনার ব্যান্ড সংগীত শিল্পী রুবেল। গত বছর করোনার শুরু থেকে সকল ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ রয়েছে। ফলে কর্মহীন হয়ে একটি বছর পার করছেন তারা। গত ২২ এপ্রিল শিল্পী কলাকুশলিরা সাহায্য পেয়েছে জানার পরে ছুটে এসেছেন শিল্পকলা একাডেমীতে কেন তারা পেলেন না এ বিষয়ে জানতে।
একই অবস্থা শিল্পকলার সদস্য অন্যান্য শিল্পী, নাট্য অভিনেতা ও কলাকুশলিদের। তাদের অভিযোগ শিল্পকলা একাডেমি না জানিয়ে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। যার কারণে প্রকৃত শিল্পীরা প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা থেকে বাদ পড়েছেন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের নেত্রী লুৎফুন নাহার পলাশি বলেন, আমরা অনেকেই এই বিষয়টা জানতাম না যে, কবে আবেদন চেয়েছে আর কিভাবে আবেদন করতে হবে। পত্রিকার মাধ্যমে জেনে আমরা আজ এসেছি। আমাদের ব্যাপারে জানিয়েছি।
খুসাস এর শিল্পী হাফিজুল ইসলাম জানান, আমি শিল্পকলা একাডেমির সদস্য। আমার কাছে কোন নোটিশ বা ম্যাসেজ যায় নাই যে আমার সাহায্যের প্রয়োজন আছে কিনা। আমরা জানতে পেরেছি অনেকেই পাননি। তাহলে কারা পেয়েছেন আমরা সেটিও জানতে চেয়েছি।
কামরুল ইসলাম কাজল বলেন, আমি চার বছর ধরে শিল্পকলা একাডেমির সদস্য। আমি একজন নাট্যশিল্পী। আমরা অনলাইন সম্পর্কে জানলেও আমরা অনলাইনে এমন ধরনের কোন তথ্য পায়নি। আমরা যে কয়জন সহায়তা পেয়েছে তাদের তালিকা চেয়েছি কালচারাল অফিসারের নিকট কিন্তু তারা তালিকা দিচ্ছেন না। তারা বলছেন যে তালিকা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে নিতে হবে। আমরা জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে তালিকা নিয়েছি। তালিকাতে একটি এনজিওর প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন চাকরিজীবীর নাম দেখছি। আর অনলাইনে আবেদনের কথা থাকলে উপজেলা পর্যায় থেকে যে সকল শিল্পীরা সাহায্য পেয়েছেন তারা কিভাবে আবেদন করেছেন এটি নিয়ে সংশয় রয়েছে। পুরো বিষয়টি আমাদের কাছে হাইড করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে জেলা কালচারাল অফিসার সুজিত কুমার সাহা বলেন, গত বছর করোনার কঠোর লকডাউনের মধ্যে এই তালিকা করা হয়েছে এবং অনলাইনে অনেক শিল্পী তৎপর নয় বলেই অনেকে বাদ পড়েছেন। তিনি বলছেন, আমরা শুধুমাত্র কর্মহীন হয়ে পড়া শিল্পীদেরই তালিকা প্রেরণ করেছি। যারা বাদ পড়েছেন তাদের ব্যাপারে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, যারা বাদ পড়েছেন তারা আবেদন করলে পর্যায়ক্রমে অবশ্যই সরকারের পক্ষথেকে তাদের করোনাকালিন সময়ে সহায়তা করা হবে।
করোনাকালীন এই সময়ে খুলনায় প্রথমে একশতজন শিল্পী, কলাকুশলি ও সাহিত্যিকদেরকে ৫ হাজার টাকা ও পরবর্তীতে ২৯৭ জনকে ১০ হাজার টাকা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।