সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : শ্যামনগরে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস পালনই করা হয় না। ফলে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না। এতে দিন দিন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে তারা।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৯১টি সরকারি প্রাথমিক, ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৮টি কলেজ ও ৩৬টি মাদ্রাসা আছে। এ ছাড়া রয়েছে ২০টি কিন্ডারগার্টেন ও ২টি এনজিও বিদ্যালয়।
কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় হাতে গোনা ১৫ থেকে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলে বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর কোনো কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না বানিয়ে শুধু আলোচনা সভা বা মিলাদ মাহফিল করে দিবসটি পালন করা হয়। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে তা-ও করা হয় না।
উপজেলার ধূমঘাট নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো শহীদ মিনার নেই। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অর্থের অভাবে প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করতে পারিনি। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি এলে স্কুলের মাঠে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
১৩৯ নং হাটছালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবোতোষ মন্ডল বলেন, শহীদ মিনার নেই। তাই একুশে ফেব্রুয়ারির আগের দিন বিদ্যালয়ের মাঠে কলাগাছের বা কাঠ দিয়ে শহীদ মিনার বানানো হয়।হাটছালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মৌলি জান্নাতুল ফেরদাউস ও পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সার্থক মন্ডল বলে, একুশে ফেব্রুয়ারির দিন স্কুলে স্যারেরা কলাগাছ দিয়া শহীদ মিনার বানায়। আমরা সকালে ওঠে ফুল দেই। তাদের দাবি সরকারি উদ্যোগে তাদের স্কুলে যেন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।
১৫৭ নং ফুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী, শাহজাহান আলী, তৃষ্ণা মন্ডল, ইয়াসিন হোসেন ও স্মৃতি সাহা জানায়, তাদের স্কুলের শহীদ মিনার নেই। শহীদ মিনার না থাকায় তারা ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে না। তাদের দাবি সরকারি উদ্যোগে তাদের স্কুলে যেন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। একই কথা জানিয়েছে ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী, কেয়া মন্ডল, ফারহানা খাতুন ও সুনিতা রানী।
একইভাবে দরগাপুর এন.ডি.এস ফাজিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাবির হোসেন জানায়, তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ও ২২ জন শিক্ষক এবং ৬ জন কর্মচারী রয়েছে। মাদ্রাসা আঙ্গিনায় শহীদ মিনার না থাকায় তারা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে না। তাদের দাবি সরকার যাতে তাদের মাদ্রাসাটিতে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেয়। একই কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিকাইল, দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোঃ কাইয়ুম ও ফাজিলের মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনের।
নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণানন্দ মুখার্জি বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় ১৫ থেকে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকী সকল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভাষা শহীদের ইতিহাস, তাৎপর্য ও সম্মান জানাতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ দরকার।
একইভাবে দাবি করেন জোবেদা সোহরাব মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুস ছত্তার। তিনি বলেন, স্কুল আঙ্গিনায় শহীদ মিনার না থাকায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে যেতে হয় যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এর জন্য অনেকটাই কষ্টের।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেস্থানীয়ভাবে অর্থব্যয় করে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব না। সরকারী উদ্যোগে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো উচিৎ। এ দিবস কি ও তাৎপর্য শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভার করার জন্য অফিস থেকে চিঠি দেওয়া হয়ে থাকে।
শ্যামনগর অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই

Leave a comment