জন্মভূমি ডেস্ক : সব কিছু তো আল্লাহর হুকুমেই হয়। পাঁচ মাস আগে যে নির্বাচন হচ্ছে, সেটাও আল্লাহর হুকুমেই হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
আজ রোববার (৩ ডিসেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল স্থগিত চেয়ে রিটের শুনানিতে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
শুনানিতে রিটকারী আইনজীবীকে আদালত প্রশ্ন করেন, আপনি কেন নির্বাচন নিয়ে সংক্ষুব্ধ হলেন। তখন আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ বলেন, আমি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। আমরা শপথ নিয়েছি। জনস্বার্থে অনেক মামলা করে রায়ও পেয়েছি। আদালত বলেন, রিটে আপনি কী চেয়েছেন?
আইনজীবী বলেন, তফসিল স্থগিত চেয়েছি। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের আরও পাঁচ মাস সময় রয়েছে। অথচ তড়িঘড়ি করে নির্বাচন করতে চাইছে কমিশন। অনেক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এ অবস্থায় নির্বাচন প্রিম্যাচিউরড।
ইউনুস আলী আকন্দ বলেন, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন করতে হলে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, মন্ত্রিসভা ছোট করতে হবে। এসব কিছুই করা হয়নি।
হাইকোর্ট বলেন, নির্বাচন কমিশনের সংবিধানের মধ্যে থেকে তাদের সুবিধামতো সময়ে নির্বাচন দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে। আর এক সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তো ২০১৮ সালে সেটেল হয়ে গেছে।
শুনানির একপর্যায়ে সংবিধানের ১২৩(৪) অনুচ্ছেদে দুর্যোগ-দুর্বিপাকের কারণে সংসদের মেয়াদ শেষে নির্বাচন প্রসঙ্গ এলে আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ বলেন, সব কিছু তো আল্লাহর হুকুমে হয়। তখন হাইকোর্ট বলেন, পাঁচ মাস আগে যে নির্বাচন সেটাও তো আল্লাহর হুকুমেই হচ্ছে।
এরপর শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, সংবিধানে স্পষ্ট বলা হয়েছে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
পরে আদালত রিটকারী আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, এটা সাংবিধানিক বিষয়। সংবিধানের মধ্যে থেকে শুনানি করতে হবে। আপনি ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে আসুন। আগামীকাল (সোমবার) আবারও এ বিষয়ে শুনব।
গত ২৯ নভেম্বর বর্তমানে একটি সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় আরেকটি সংসদ নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, মন্ত্রীপরিষদ সচিব, আইন সচিবসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয় রিট আবেদনে।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন এ আইনজীবী। বর্তমানে রাজনৈতিক সংকট চলছে উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, দেশে হরতাল-অবরোধ চলছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব নয়। তাছাড়া মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীর ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, আবার নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। তাহলে ট্যাক্স রিটার্নপত্র মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা কীভাবে সম্ভব হবে।
এছাড়া হরতাল অবরোধের ফলে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত নয়। এ অবস্থায় নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানানো হয়।