শেখ আব্দুল হামিদ
খুলনার বাজারে বেড়েই চলেছে চাল মুরগিসহ নতুন সবজির দর। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দিলেও তার সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। ছাড়ের পর চালের দাম তো কমেইনি, উল্টো বেড়েছে। একই ভাবে ছুটেই চলেছে মুরগির দর। ২২০ টাকার সোনালী মুরগি ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। পাকিস্তানি কক মুরগির দাম কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এনিয়ে টানা দুই সপ্তাহ দাম বাড়ার মাধ্যমে মুরগি এখন অনেকটাই নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে।
অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে প্রথমে চাল আমদানির শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। পরে তা আরও কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। বাসমতি ও অটোমেটিক চাল বাদে সব ধরনের চাল আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে গত ১৭ জানুয়ারি সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সরকার যখন চাল আমদানির শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়, সে সময় খুলনার বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের কেজি বিক্রি হচ্ছিল ৬০ থেকে ৬৪ টাকা। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের কেজি ছিল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা। মোটা চাল ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। আমদানি শুল্ক কমানোর পর এক মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব এখনও বাজারে পড়েনি। উল্টো গত এক সপ্তাহে চালের দাম নতুন করে আরও বেড়েছে। এখন খুচরা পর্যায়ে নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৭০ টাকা। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের কেজি ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। গরিবের মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার ওপর।
চালের দামের বিষয়ে বড় বাজারের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, গত এক মাসে কোনো ধরনের চালের দাম কমেনি। বরং সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তিনি বলেন, বাজারে এখন ৫০ টাকার নিচে কোনো চাল নেই।
শুক্রবার খুলনার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা।
ব্রয়লার মুরগির থেকেও দ্রুত গতিতে ছুটছে পাকিস্তানি সোনালী বা কক মুরগির দাম। গত সপ্তাহে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালী মুরগির দাম বেড়ে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর দুই সপ্তাহ আগে এই মুরগির দাম ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালী মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৭০ টাকা এবং দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ১২০ টাকা। নগরির গল্লামারী বাজারে মুরগি কিনতে এসে মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধু শাহিদা পারভিন বলেন, আমাদের কপাল থেকে গরুর মাংস এক প্রকার উঠে গেছে। এবার মুরগিও উঠে যাবার পথে রয়েছে।
একই সাথে বাজারে নতুন ওঠা সবজি সজিনার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে আগের মতো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০টাকা, শশার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা। বেগুনের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাঁজরের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কয়েত সপ্তাহ ধরেই এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ফুলকপি, বাঁধাকপির ও লাউয়ের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা পিস। সবজির মতো সপ্তাহের ব্যবধানে একই রয়েছে পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম। খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। এক ডজন ডিম পাওয়া যাচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকায়।
সবজির দামের বিষয়ে নগরীর সন্ধ্যা বাজারের ব্যবসায়ী আফসার আলী বলেন, কম দামে সবজি খাওয়ার দিন আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। পাকা টমেটোর সরবরাহ কিছুটা কমলেও দেখবেন সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে টমেটো কোল্ডস্টোরেজে যাওয়া শুরু হয়ে গেছে। আমাদের ধারণা এ মাস শেষ হওয়ার আগেই সবজির দাম বেড়ে যাবে।