জন্মভূমি রিপোর্ট : খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে খুলনাসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নানান রোগের চিকিৎসার জন্য রোগী আসেন। অন্যদিকে আন্ত:বিভাগ ও বহির্বিভাগে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা এসে ভিড় জমায়। চিকিৎসকের কক্ষের সামনে রোগীদের সিরিয়ালের পাশেই তারা জোটবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। নিজেদের কাজের প্রয়োজনে হাসপাতালের নিয়ম লঙ্ঘন করে প্রেসক্রিপশন দেখতে চেয়ে রোগীদের বিরক্ত করেন। এটা গেলো বহির্বিভাগের চিত্র। আর যেদিন যে বিভাগের রোগীর ভর্তির দিন থাকে সেদিন ওই ওয়ার্ডের মধ্যে ওষুধ প্রতিনিধিরা ডাক্তারের টেবিলের সামনে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকেন। রোগীর থেকে ওষুধ প্রতিনিধির সংখ্যাই বেশি।
ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, চিকিৎসকের টেবিলের চারপাশেই বিভিন্ন ওষুধ প্রতিনিধিরা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। রোগীদের রোগের বিবরণ জেনে চিকিৎসকদের নিজেদের কোম্পানির ওষুধ দেওয়ার সুপারিশ করেন তারা। অনেক ওষুধ সরকারিভাবে হাসপাতালে সাপ্লাই থাকলেও সেই ওষুধ না লিখে ওষুধ প্রতিনিধিদের দেওয়া ওষুধ লিখছেন চিকিৎসকরা। একই অবস্থা সার্জারি ১১-১২ ওয়ার্ডেও। এছাড়া বহির্বিভাগে রোগীরা ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হতেই সাত-আট জন তাদের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েন। রোগীদের প্রেসক্রিপশনে ওষুধের বিবরণ জানতে, প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে রোগীদের প্রচণ্ড বিরক্ত করেন তারা। সেখানেও চিকিৎসকদের নিজেদের কোম্পানির ওষুধ দেওয়ার সুপারিশ করেন তারা। সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখার সময় তারা গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই হাসপাতালে মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের সপ্তাহে দুই দিন দুপুর ১টার পর চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময়। অথচ সকাল থেকেই হাসপাতালে ভিড় করেন তারা। নাছোড়বান্দা মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের চাপে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র তাদের দেখাতে বাধ্য হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এতে রোগীদের গোপনীয়তা রক্ষা হচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য দিনদিন বেড়েই চলেছে। এতে হাসপাতালে চিকিৎসার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে এমন অভিযোগ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের।
অন্যদিকে খুমেক হাসপাতালে সবধরনের ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ রোগীদের। হাসপাতালের রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসাপত্রে উল্লেখ করা ওষুধের কিছু হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হলেও, কিছু ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। রোগীরা বলছেন, হাসপাতাল থেকে শুধু সরকার নিয়ন্ত্রিত এ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএলের) ওষুধ সরবরাহ করা হয়। তাও আবার সব ওষুধও আমাদেরকে দেওয়া হচ্ছে না। আর ঠিকাদারের সরবরাহ করা কোনো ওষুধ রোগীদের দেওয়া হয় না।
চিকিৎসা নিতে আসা ফয়সাল বলেন, ‘চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে ৬-৮টি ওষুধ লিখে দিয়েছেন। প্রথম দিন সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনা লাগছে। দুই দিন পর শুধুমাত্র একটি গ্যাসের ইনজেকশন পাইছি। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। কখনোই পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ পাননি। ‘ওষুধ চাইলে নার্সরা বলেন, সব ওষুধের সরবরাহ নেই।’
এ ব্যপারে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. হুসাইন সাফায়াত বলেন, সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার দুইদিন ওষুধ প্রতিনিধিরা হাসপাতালে দুপুর একটার পর ভিজিট করতে পারবেন। এই দুই দিনের বাইরে কেউ হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারবেন না। তিনি বলেন, ইডিসিএলের ওষুধ সরবরাহ আছে। কেউ যদি সরকারি ওষুধ খুমেক হাসপাতালে সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও কোন ওষুধ প্রেসক্রিপশনে না লিখেন সেটা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া ওষুধ প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।