জন্মভূমি ডেস্ক : সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের অধিকারের ইস্যুগুলো অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের আদিবাসী সংগঠনসমূহের ঐক্য পরিষদ (ইউসিজিএম)। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় ১১টি দাবি উপস্থাপন করা হয়।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক কলামিস্ট ও আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, বৃহত্তর ময়মনসিংহের আদিবাসী সংগঠনসমূহের ঐক্য পরিষদের (ইউসিজিএম) সভাপতি মি. অজয় এ মৃ ও মহাসচিব লেখক ও গবেষক অরন্য ই চিরান, টাঙ্গাইল মধুপুরের জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মি ইউজিন নকরেক, বাংলাদেশ আদিবাসী ল’ইয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীনেশ দারু, আচিক মিচিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মিসেস সুলেখা ম্রং, বাংলাদেশ কোচ জাতীয় সংগঠক সন্যাসী রমেশ কুমার কোচ প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের মহাসচিব লেখক ও গবেষক অরন্য ই চিরান বলেন, সারা বিশ্বে ৭০টি দেশে প্রায় ৩০ কোটি আদিবাসী রয়েছে। বাংলাদেশেও কমপক্ষে ৫০টির বেশি সম্প্রদায়ের ৫০ লক্ষাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে, যাদের শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ সমতল এলাকার বাসিন্দা এবং বাকি ২৫ ভাগ জনগোষ্ঠী তিনটি পার্বত্য জেলার অধিবাসী। সমতল এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ দেশের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের কতিপয় জেলা ছাড়া প্রায় সব জেলাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করে আসছে। তবে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা, উত্তর বঙ্গের বরেন্দ্র অঞ্চল, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার প্রভৃতি জেলাতে বেশি সংখ্যক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের বাস দেখা যায়। এ দেশে আমরা যারা নিজেদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসাবে দাবি করি, আমাদের নিজস্ব ভাষা আছে, পোশাক আছে, সংস্কৃতি আছে, ঐতিহ্য আছে, নিজস্ব বাদ্য যন্ত্র আছে, সতন্ত্র কিছু খাবার-দাবার আছে যার ওপর আমরা নির্ভরশীল; যা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে থাকলেও আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এ দেশের আদিবাসীদের জন্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আইন ২০১০ প্রনয়ণ করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ (ক) ধারায় সংযোজন করেছে, যা আদিবাসীদের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা ছিল। উক্ত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে; কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, তাতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। যার মাধ্যমে তাদের অধিকার ও অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে। তাই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও অস্তিত্ব রক্ষার নিমিত্তে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ইস্যুসমূহ অন্তর্ভুক্তির দাবি জানাচ্ছি।