জন্মভূমি ডেস্ক : চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই থেকে জানুয়ারি) বিশ্ববাজারে ৩ হাজার ৩২৬ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার বা ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারিতে রফতানি হয়েছিল ৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পণ্য। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এমন দাবি করছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। যদিও তাদের এ পরিসংখ্যানে আস্থা রাখতে পারছেন না রফতানিকারকরা।
এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের রফতানির ৮০ শতাংশেরও বেশি অংশজুড়ে রয়েছে তৈরি পোশাক। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর ভোক্তাদের ক্রয়াভ্যাসে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে কাঙ্খিত পরিমাণে ক্রয়াদেশ আসছে না। অন্যদিকে দেশে ডলার সংকটে ঋণপত্র খোলা নিয়ে সমস্যা কাটেনি। এর প্রভাব রয়েছে কাঁচামাল আমদানিতে। আবার ঋণপত্র নিষ্পত্তিতেও রয়েছে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। এ পরিস্থিতিতে রফতানি বাড়েনি, বরং কমেছে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বস্ত্র ও পোশাক খাতের বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বলেন, ‘২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে আমার প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা কমেছে অন্তত ২০ শতাংশ। আমার প্রতিষ্ঠানটি পোশাক খাতের অন্যতম বৃহৎ। এ ধরনের বড় সব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারই একই অবস্থা। ফলে সরকারের প্রকাশিত রফতানি পরিসংখ্যান কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানও ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সেখানে দেখা যাচ্ছে, শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তি উভয়ই কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধ গত জুলাই থেকে ডিসেম্বরে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ। ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ৩১ দশমিক ২১ শতাংশ।
পোশাক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিসংখ্যানেও পাওয়া যাচ্ছে ব্যবসা কমে যাওয়ার চিত্র। এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট পিএলসির আয় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে কমেছে ১৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। দেশ গার্মেন্টসের আয় কমেছে ২৮ শতাংশ।
ইপিবির প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া শীর্ষ পণ্যগুলো হলো পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং হোম টেক্সটাইল। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে দেশের মোট রফতানির ৯১ দশমিক ৭৭ শতাংশজুড়ে ছিল এসব পণ্য। আগের অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের তুলনায় এবার একই সময়ে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমেছে। কৃষিপণ্য রফতানি বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। কমেছে হোম টেক্সটাইল পণ্য রফতানি, ৩৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ হিসাবে শীর্ষ পণ্যগুলোর মধ্যে পোশাক ও কৃষি ছাড়া বাকিগুলোর রফতানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
ইপিবি প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে মোট রফতানির ৮৫ দশমিক ২৬ শতাংশই তৈরি পোশাক। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববাজারে ২ হাজার ৮৩৬ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৪১ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার ডলার। সে হিসাবে মোট পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর মধ্যে নিটওয়্যার তৈরি পোশাক রফতানিতে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে ওভেনে প্রবৃদ্ধি কমেছে ২ দশমিক ২০ শতাংশ।
বাংলাদেশ থেকে গত জানুয়ারিতে ৫৭২ কোটি ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য বিশ্ববাজারে রফতানি হয়েছিল। ২০২৩ সালের একই মাসে রফতানি হয়েছিল ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এই এক মাসে রফতানি বেড়েছে বা প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
ইপিবির পরিসংখ্যান নিয়ে কথা হয় রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ডলারের হিসাবে কীভাবে রফতানি বাড়ল তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সরকারি তথ্যের সঙ্গে আমাদের হিসাব কোনোভাবেই মিলছে না। পরিমাণ যদি কমে থাকে তাহলে ডলারে বাড়ল কেন? আবার বড় রফতানিকারকরা বলছেন তাদের রফতানি কমেছে। তাহলে রফতানি বাড়লটা আসলে কাদের? গত অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের নভেম্বরে যখন রফতানির অর্থমূল্য ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি দেখানো হলো, তখনই আমি বলেছিলাম হিসাব মিলছে না। এখনো সংগঠনের ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশনের যে তথ্য তার সঙ্গে তুলনা করলে হিসাব মেলে না। সরকারি তথ্য চ্যালেঞ্জ করছি না, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে এ হিসাব মেলে না।’
সাত মাসে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রফতানি
![](https://dainikjanmobhumi.com/wp-content/uploads/2024/02/05-02-2024-49-330x220.jpg)
Leave a comment