বিশেষ প্রতিবেদক : ইলিশ এখন বৈশ্বিক সম্পদ। বাংলাদেশের জাতীয় জিডিপির ১ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। দেশে ২৪ লাখের বেশি মানুষ ইলিশকেন্দ্রিক জীবিকা নির্বাহ করেন।
বাংলাদেশ ইলিশ আহরণে শীর্ষ দেশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন। যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭১ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৯২ শতাংশ।
সরকার ব্যবসায়ীদের টুনা শিকারের জন্য ৫৫ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের জাহাজ আমদানি করতে বলছে। অথচ এ খাতে সরকারি প্রকল্পের জন্য তিনটি জাহাজ কেনা হচ্ছে মাত্র ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের। এ বৈষম্য কেন? আমাদেরও যদি ওই মানের জাহাজ দিয়ে টুনা শিকারের অনুমতি দেওয়া হতো তবে মৎস্য আহরণে দেশ অনেক এগিয়ে যেতো
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ফিশারি ঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, নতুন মৌসুম শুরুর পর চট্টগ্রাম উপকূলে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার টন ইলিশ ধরা পড়ছে। তার মধ্যে শুধু ফিশারি ঘাটেই ৫০০ টনের বেশি ইলিশের বিকিকিনি হয়। তাছাড়া সদরঘাট, রাশমনিঘাট, আনন্দবাজার, উত্তর কাট্টলী, দক্ষিণ কাট্টলী ও আকমল আলী ঘাটে আরও অন্তত ৫০০ টন ইলিশ নামছে প্রতিদিন।
তবে পানিদূষণ ও নাব্য সংকটসহ নানা কারণে জাতীয় মাছ ইলিশ বাংলাদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
‘জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের বিকল্প সংস্থান ও গবেষণা (কম্পোনেন্ট এ ও বি)’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইলিশ-সমৃদ্ধ পদ্মা, মেঘনা ও অন্য নদীসমূহের তীরবর্তী শহর এবং কলকারখানা থেকে নিঃসৃত বর্জ্য সরাসরি নদীর পানিতে মিশছে। ফলে সেসব নদীর পানির গুণাগুণ ক্রমান্বয়ে মাছসহ জলজ প্রাণীর বাসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ইলিশ একসময় হয়তো বাংলাদেশের জলসীমায় প্রজনন বন্ধ করে অন্য কোথাও নতুন ক্ষেত্র বেছে নিতে পারে।
গবেষক হাসান আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, সমুদ্র থেকে আহরিত মাছের ৬০ শতাংশই ইলিশ। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারগুলো গভীর সাগরে মাত্রাতিরিক্ত ইলিশ আহরণ করছে, ফলে ইলিশ নিয়েও শঙ্কা আছে। ইলিশ অনেক হাইলি মাইগ্রেটরি মাছ। এক জায়গায় বাস্তুসংস্থানের সমস্যা হলে তারা বাসস্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যায়। বাংলাদেশে ২০০২-০৩ সময়ে ইলিশ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।
তিনি বলেন, শুধু সুন্দরবনকে যদি মাছের জন্য সংরক্ষিত করা যেতো, অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলা যেতো, তাহলে দেশের সমুদ্র উপকূলে মাছের প্রজনন ও বাস্তুসংস্থানের সংকট হতো না।