জন্মভূমি ডেস্ক
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, সুন্দরবনে র্যাব অপারেশন শুরু করলো, আর সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়ে গেল বিষয়টা কিন্তু এরকম নয়। এজন্য অনেক রক্ত ঝরাতে হয়েছে, ঘাম ঝরাতে হয়েছে।
শুক্রবার রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী বিচে র্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের প্রযোজনায় নির্মিত অপারেশন সুন্দরবন সিনেমার ট্রেইলার উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। পুলিশ প্রধান বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেশকে ভালোবেসে সর্বোচ্চ দেশপ্রেম নিয়ে দায়িত্ব পালন করে। শুধু মাস শেষে একটা বেতনের চেক পাবে, তারা সেজন্য দায়িত্ব পালন করে না।
র্যাব মহাপরিচালক হিসেবে প্রায় পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি দেখেছি কি মমত্ববোধ নিয়ে তারা দায়িত্ব পালন করেছে। কারো হাত উড়ে গেছে, পা হারিয়েছে। কিন্তু কখনো দায়িত্ব থেকে তারা পিছপা হয়নি। তারা দেশকে জঙ্গি মুক্ত করেছে, সন্ত্রাসমুক্ত করেছে, সুন্দরবনকে বনদস্যু মুক্ত করেছে। তারা তাদের জীবনকে মৃত্যুর মুখোমুখি করতে পিছপা হননি।
তিনি বলেন, মহাপরিচালক হিসেবে আমার নির্দেশে তারা জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করেছে। অপারেশন সুন্দরবন সিনেমার পটভূমি তুলে ধরে তিনি বলেন, এ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য পরিচালক দীপংকর দীপনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ও তার টিম তিন মাস সুন্দরবনে অবস্থান করেছেন, গবেষণা করেছেন, আমাকে ৭০০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। তখন আমার মনে হয়েছে, তিনি পারবেন। পরে তাকে সিনেমাটি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আইজিপি বলেন, সুন্দরবনের বনদস্যুরা এখন সমাজের মূলধারায় মিশে আছে। তারা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করছে, ভালো আছে। এটা একটা ইউনিক কার্যক্রম। এ ধরনের কার্যক্রম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বিশ্বের কোথাও হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
যেভাবে আমরা জঙ্গিবাদ দমন করেছি এটাও একটা ইউনিক মডেল। তিনি বলেন, গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্সে আমাদের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান, যুক্তরাজ্যের অবস্থান অনেক নিচে। এটা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শে এবং আপনাদের সমর্থনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করতে পেরেছে।
তিনি বলেন, সুন্দরবন জলদস্যমুক্ত হওয়ার ফলে এ অঞ্চলের ২৫লাখ মানুষ এর সুবিধাভোগ করছে। ব্রাজিল আমাজানের বন থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে। সুন্দরবনে যে শান্তির সুবাতাস বইছে আমরাও এখান থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবো। তিনি বলেন, সুন্দরবন বনদস্যু মুক্ত হওয়ার ফলে এখানে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে, হরিণের সংখ্যা বেড়েছে। এখানে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে।
আইজিপি বলেন, বর্তমান দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা কমেছে, সিনেমার সংখ্যা কমছে। তবে এখন কিছু ভালো ছবি হয়েছে। আমাদের দেশে সুস্থ বিনোদনের বিকাশ হোক। অপরাধীরা সুস্থ জীবনে ফিরে আসুক, কিশোররা কিশোর গ্যাং থেকে ফিরে আসুক। তিনি অপারেশন সুন্দরবন সিনেমা উপভোগ করার জন্য দর্শকদের আমন্ত্রণ জানান। তিনি সিনেমাটির পরিচালক, কলাকুশলীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, দস্যুমুক্ত সুন্দরবন একটি বিশাল অর্জন। এ অর্জনের পথ মসৃণ ছিল না। এজন্য দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে হয়েছে। আমরা আমাদের ৩০জন সহযাত্রীকে হারিয়েছি, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তারা সহযোগিতা করেছে। সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে সহযোগিতা করার জন্য বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
অপারেশন সুন্দরবন সিনেমা আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাবে।