আল্লাহতাআলা জ্ঞান অর্জনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। কোরআন করিমে আল্লাহপাক শিক্ষাকে ‘আলো’ এবং মূর্খতাকে ‘অন্ধকার’ বলে উল্লেখ করেছেন। যারা শিক্ষার আলোয় আলোকিত তাদের ‘উৎকৃষ্ট জীব’ বলা হয়েছে, অন্যদিকে যাদের শিক্ষার আলো নাই তাদের ‘নিকৃষ্ট জীব এবং অন্ধ’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
হজরত রাসুল করিম (সা.) তাই বলেছেন, ‘সন্তান গর্ভে আসার পর থেকেই তার তরবিয়ত অর্থাৎ চরিত্র গঠন শুরু করা উচিত।’ জন্মের পর শিশুর শিক্ষা পরিবারের আওতাভুক্ত থাকে। পরিবার ও তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ভালো হলে শিশুর শিক্ষাও সঠিক এবং সুন্দর হয়। এখানে শিশুর শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার ভূমিকাই প্রধান। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আগে গৃহের পরিবেশই হলো শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গন, যেখানে শিশুর সত্যিকার স্তম্ভ গঠিত হয়। তাই শিশুকে ধর্মীয় উত্তম শিক্ষায় গড়া তোলার পেছনে তার পরিবার ও পিতা-মাতার ভূমিকাই সর্বাগ্রে।
আল্লাহতাআলা আদেশ করেছেন, ‘তুমি পাঠ কর কেননা তোমার প্রতিপালক পরম সম্মানিত, যিনি কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে তা যা সে জানত না’ (৯৬:৩-৮)। ‘যাকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে’ (২: ২৬৯)। তিনি আরও বলেন, ‘তুমি বল যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? বস্তুত ধীসম্পন্ন লোকগণই কেবল শিক্ষা লাভ করে’ (৩৯: ৯)।
শিক্ষা মানুষকে আয়ত্ব করতে হয়। জন্মের পর থেকে শিশু তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে শিখতে শুরু করে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার সূত্রে ও বংশগতভাবে কতগুলো বিষয় শিশুর মধ্যে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। বিশেষ করে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় মাতার অনেক আচরণ ও আমল শিশুর মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু সাধারণ অর্থে শিক্ষার যে সংজ্ঞা, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, জন্মের পর একটি সত্যিকার মানুষরূপে গড়ে তুলতে সাহায্য করে ‘শিক্ষা’। মানুষকে নীতিবান ও বিবেকবান করে তোলে ‘শিক্ষা’। এ কারণে আগে যে শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল তা ছিল গুরুগৃহে অবস্থান পূর্বক শিক্ষা লাভ করা। এ ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর গুরুগৃহে অবস্থান করতে হতো।
শিক্ষাগুরু শিক্ষার্থীকে দৈনন্দিন শিষ্টাচার, ধর্মীয় শিক্ষাসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা দিতেন। প্রাচীন ভারতেও এ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। শিক্ষার্থী শিক্ষাগুরুর শিষ্যত্ব লাভ করে সাহচর্যে থেকে বিভিন্ন শাস্ত্রে পান্ডিত্যসহ চরিত্র গঠন, আদব-কায়দা ও ধর্মীয় শিক্ষা লাভের সুযোগ পেত। গুরুগৃহে শিষ্যের অবস্থানের মেয়াদ ছিল ৫ বছর থেকে ১০-১৫ বৎসরকাল। তখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা খুবই কম ছিল। থাকলেও প্রথমে গুরুগৃহে শিক্ষা গ্রহণ করতে হতো। তাই দেখা যায় বড় বড় মণীষী ও জ্ঞানীগুণী পন্ডিতরা যারা গত হয়েছেন তারা কোনো না কোনো গুরুর শিষ্য হয়ে জ্ঞান লাভ করেছেন।