স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক চার বারের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান সিরাজ আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তার মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শোক জানিয়েছেন। শাহাজাহান সিরাজ স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
১৯৪৩ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জন্মগ্রহণ করেন শাহজাহান সিরাজ। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়োর মধ্যদিয়ে শাহজাহান সিরাজ ছাত্র-রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সেই সময়ে তিনি টাঙ্গাইলের করটিয়ো সা’দত কলেজের ছাত্র ছিলেন।
পরে তিনি ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র-রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬৪-৬৫ এবং ১৯৬৬-৬৭ দুই মেয়োদে তিনি দুইবার করটিয়ো সা’দাত কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। একজন সক্রিয়ে ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যত্থানে অংশগ্রহন করেন। এরপর তিনি ১৯৭০-৭২ মেয়োদে অবিভক্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ (যার অন্য নাম নিউক্লিয়োস) এর সক্রিয়ে কর্মী, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা।
মুক্তিযুদ্ধের পর সর্বদলীয়ে সমাজতান্ত্রিক সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতীয়ে সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন, যা ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল। জাতীয়ে সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সহকারী সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন শাহজাহান সিরাজ। পরবর্তীতে জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাসদের মনোনয়েনে ৩ বার তিনি জাতীয়ে সংসদের টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
শাহজাহান সিরাজ ১৯৯৫ সালে বেগম খালেদা জিয়োর নেতৃত্বাধীন বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি বিএনপির মনোনয়েনেও একবার একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বেগম খালেদা জিয়ো সরকারের শেষ পর্যায়ের দিকে নৌপরিবহন মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
শাহজাহান সিরাজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যাদের ‘চার খলিফা’ বলা হতো শাহজাহান সিরাজ ছিলেন তাদেরই একজন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ তিনি সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব প্রভৃতি ছাত্রনেতার পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন আ স ম আবদুর রব। সেখান থেকেই পরবর্তী দিনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের পরিকল্পনা করা হয়ে। সিদ্ধান্ত অনুযায়েী ৩ মার্চ ১৯৭১ পল্টন ময়েদানে বিশাল এক ছাত্র জনসভায়ে বঙ্গবন্ধুর সামনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন শাজাহান সিরাজ। পরে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি সশস্ত্র যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স’ (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।