চীনের উহান থেকে উদ্ভূত কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস হন্তারক মহামারী রূপে প্রায় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণেই সম্ভবত বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের চরম অব্যবস্থা, অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উদ্ঘাটিত হতে শুরু করেছে। একের পর এক বেরিয়ে আসছে নানাবিধ অপকর্ম ও অপতৎপরতার কাহিনী। এর সর্বশেষ জ্বলন্ত উদাহরণ রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতাল, যার আবার দুটি শাখা রয়েছে। জানা যায়, জেকেজিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রতারণা ও জালিয়াতির খবর। এর বাইরেও রয়েছে আরও নানা দুর্নীতি-অনিয়মের খবরাখবর, যা ছড়িয়ে রয়েছে দেশব্যাপী এবং প্রধানত কোভিড-১৯কে ঘিরেই। স্বস্তির কথা এই যে, এসব প্রতারকের কয়েকজন যেমন রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদ, এমডি পারভেজ, জেকেজির চেয়ারম্যান ডাঃ সাবরিনা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর আরিফসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়া হয়েছে ও হবে। প্রশ্ন হলো, কোভিড-১৯কে ঘিরে এই যে রাতারাতি একটি প্রতারক গোষ্ঠী গড়ে উঠতে পারল, সেটি কোন মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতার বলে? এর দায় সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় এড়িয়ে যেতে পারে না কিছুতেই। সে ক্ষেত্রে ধৃতদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে নিশ্চয়ই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের টানাপোড়েনও লক্ষণীয় বৈকি, সেটিও প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসেছে কোভিড-১৯ কে ঘিরেই। এখন দেখা যাচ্ছে দেশে গড়ে ওঠা বিশালাকার ও ব্যয়বহুল বেসরকারী হাসপাতালগুলো একেবারেই নিয়ন্ত্রণহীন ও লাগামছাড়া। এমনকি আইসিডিডিআরবির মতো আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল এবং স্বনামখ্যাত বারডেম হাসপাতাল পর্যন্ত বছরের পর বছর ধরে চলছে লাইসেন্সবিহীন, ভাবা যায়! সরকারী হাসপাতালগুলোও যে ভাল চলছে না তার উদাহরণ করোনার জন্য প্রথম ব্যবহৃত কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, মুগদা হাসপাতাল ইত্যাদি। যেখানে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়, সেখানে কেবল এটুকুই কি যথেষ্ট? এর পাশাপাশি রয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের বিপুল অর্থ ব্যয়ে মাত্রাতিরিক্ত দামে নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই, গøাভস, স্যানিটাইজার এবং ওষুধপত্র কেনার বিস্তর অভিযোগ- যেসব বেরিয়ে এসেছে সরেজমিন তদন্তের মাধ্যমে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শুধু অসততা, নীতি-নৈতিকতা বহির্ভূত অভিযোগই নয়, দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সর্বজনমহলে। এহেন অব্যবস্থা, অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতি এমনকি প্রায় অরাজকতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে স্বাস্থ্য খাতে তা চলতেই থাকবে আগামীতেও। প্রয়োজনে পুরনো আইন সংস্কার করতে হবে।