ডেস্ক রিপোর্ট : ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ এর ডাকা ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে স্রোতের মতো জনতার মিছিল আসছে ঐতিহাসিক শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় এই গণজামায়াতে শুরু কথা থাকলেও সকাল থেকেই ফিলিস্তিনের পতাকা ও প্রতিবাদী ব্যানার হাতে এসে জনতা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
সকাল থেকেই আসতে শুরু করে ছোট-বড় মিছিল। কোনো মিছিল আসছে শাহবাগের দিক থেকে, কোনোটি দোয়েল চত্ত্বরের দিক থেকে, কোনোটি আবার আসছে নীলক্ষেতের দিক থেকে। এখানে আসা প্রায় সবার হাতে রয়েছে দেশের পতাকা ও ফিলিস্তিনের পতাকা। সবার লক্ষ্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, সেখানেই গাজার নিরস্ত্র জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ, বিশ্বজনমত গঠন এবং মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে সোচ্চার হওয়াই লক্ষ্য সবার।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রতিটি প্রবেশপথে স্বেচ্ছাসেবকরা কর্মসূচি সুশৃঙ্খল রাখতে তৎপর ছিলেন সকাল থেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর ও আশপাশের এলাকায় দেখা যায়, স্থানীয় বিক্রেতারা দেশীয় পতাকার পাশাপাশি সাজিয়ে বসেছেন ফিলিস্তিনের পতাকা।
দলমত নির্বিশেষে নানা বয়সী মানুষ এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। শুধু ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি জানানো নয়, বরং মানবতার পক্ষেও এই অবস্থান বলে জানান অনেক অংশগ্রহণকারী। তারা জানান, ফিলিস্তিনে মুসলমানদের ওপর যেভাবে গণহত্যা চালানো হচ্ছে, তা সহ্য করা যায় না। তাই প্রতিবাদ জানাতে আজ এখানে এসেছি।
মূল অনুষ্ঠান বিকেলে হলেও সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রতিটি গেটেই মানুষের ঢল নেমেছে। গাজায় চলমান বর্বরোচিত ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন এবং মানবিক সহানুভূতি জাগ্রত করতেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী এই গণজমায়েত। বিকেল ৩টা থেকে মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে এই ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটক সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানুষের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই। এরই মধ্যে চলছে কম্পিত হওয়া মিছিল স্লোগান। আর এই মিছিল স্লোগানে অংশ নিয়েছেন ধানমন্ডি থেকে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জুলফিকার আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমানে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের জীবনে যেন মহাপ্রলয় নেমে এসেছে। ফিলিস্তিনের মুসলমানরা ইসরায়েলি বাহিনীর নির্যাতন, হামলা ও দখলদারিত্বের শিকার হয়ে আসছে। এই অবস্থান আমরা মুসলিম হিসেবে কিছুই করতে পারছি না। আজ অন্তত সুযোগ এসেছে তাদের যে আমরা পাশে আছি- এটা জানান দেওয়ার জন্য। আর এটাই আমাদের প্রতিবাদ। মুসলমান হিসেবে তাদের প্রতি সমর্থন জানানোর।
তিনি বলেন, এই একই কাজ আজ করতে এসেছেন লাখ লাখ মুসলিম। এখানে এমন অবস্থা মানুষের এত ব্যাপক উপস্থিতিতে পা ফেলার জায়গা পর্যন্ত নেই। লোকে লোকারণ্য আশপাশের সব এলাকা।
দোয়েল চত্বরের দিক থেকে টিএসসি হয়ে মিছিলের সঙ্গে আসা আরেকজন মোতাসিম বিল্লাহ নামে একজন বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কোনো কর্মসূচিতে মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে বাইরেই এত মানুষের ঢল আগে কখনোই দেখিনি। যতদূর দেখা যাচ্ছে দল বেঁধে আসছে মানুষ, যেন এক জনসমুদ্র। সবার কণ্ঠে স্লোগান, আর ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার। গাজায় চলমান বর্বরোচিত ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। মুসলিম হিসেবে অন্য মুসলিমদের পাশে যে আমরা আছি তা জানান দিতেই আজ আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে গোটা বিশ্বেই। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ এর ব্যানারে আয়োজিত হচ্ছে ‘মার্চ ফর গাজা’।
বিনামূল্যে খাওয়ানো হচ্ছে পানি-শরবত
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। গরমের মধ্যে সমাবেশে আসা লোকদের স্বস্তি দিতে বিনামূল্যে পানি ও শরবত বিতরণ করছে তাওহীদ নামের একটি ফাউন্ডেশন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশমুখের একটু পাশেই ট্রাকে করে পানি ও শরবত এনেছে সংগঠনটি। মাইকে করে সবাইকে ডাকছে শরবত পান করার জন্য। তীব্র গরমে স্বস্তি পেতে অনেকেই শরবত পান করছেন।
সমাবেশে আসা মিজান আহমেদ নামে একজন বলেন, ফিলিস্তিনের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে আমরা এখানে এসেছি। তবে যেহেতু কড়া রোদ পড়ছে, তৃষ্ণাও পাচ্ছে। তাই বিনামূল্যের এই শরবত খেলাম। যারা এই উদ্যোগ নিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ।
লিটন মাহমুদ নামে আরেকজন বলেন, গরম যেহেতু পড়েছে, বারবারই পানির তৃষ্ণা পায়। কিন্তু এক বোতল পানির দাম ২০ টাকা, এক গ্লাস শরবতের দাম ১০-২০ টাকা। অল্প অল্প করে হলেও পানির জন্য অনেক টাকাই খরচ হয়ে যেত। সেখানে বিনামূল্যে পানি-শরবত আমাদের মতো সমাবেশে আগতদের স্বস্তি দিচ্ছে।
তাওহীদ ফাউন্ডেশনের এক কর্মী বলেন, সমাবেশে আগত মানুষদের একটু স্বস্তি দিতেই আমাদের এ সামান্য আয়োজন। তাছাড়া আমরা চাই সবাই ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করুক।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে আজ (শনিবার) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি। বিকেল ৩টায় এই গণজমায়েত শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।