জন্মভূমি ডেস্ক : ২০২২-২৩ অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সাড়ে সাত শতাংশ। যদিও গত মে মাসে সাময়িক হিসাবে তা ছয় দশমিক ০৩ শতাংশ দেখানো হয়েছিল। তবে চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সে হারও ধরে রাখা যায়নি। অবশেষে তা দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত অর্থবছরের শুরু থেকে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করা, আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ ও এলসি খোলা ব্যাপকভাবে হ্রাসের ফলে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, সরকারি ব্যয় কমানো ও কৃচ্ছ সাধন নীতি অনুসরণ, জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়া এবং সার্বিকভাবে সেবা খাতে মন্দাভাবের কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর প্রভাবই দেখা গেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধির চিত্রে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ০৭ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে এবারই প্রথম প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপির হিসাব প্রকাশ করল বিবিএস। এ হিসাবও বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে।
বিবিএসের প্রকাশিত হিসাবে দেখা যায়, গত অর্থবছর দেশের কৃষি উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও শিল্প ও সেবা খাতে তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যেটি আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ০৫ শতাংশ।
যদিও শিল্প খাতে গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, আগের বছরে যা ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ২০২২-২৩ অর্থবছর কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশে, যা ২০২১-২২ অর্থবছর ছিল ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
শিল্প খাতের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে। এ খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছর প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা আগের অর্থবছর ছিল ছয় দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে প্রবৃদ্ধি পৌনে আট থেকে কমে দাঁড়িয়েছে তিন দশমিক ৪০ শতাশ। আর গ্যাসের প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ ঋণাত্মক থেকে আরও কমে দাঁড়ায় এক দশমিক ৮৪ শতাংশ ঋণাত্মক। এছাড়া নির্মাণ খাতে গত অর্থবছর প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছর ছিল আট দশমিক ৭১ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্যমতে, গত অর্থবছর বৃহৎ শিল্পে প্রবৃদ্ধির হার অর্ধেকে নেমেছে। এ শিল্পে প্রবৃদ্ধির হার ২০২২-২৩ অর্থবছর দাঁড়িয়েছে আট দশমিক ৫৩ শতাংশ। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছর বৃহৎ শিল্পে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তবে গত অর্থবছর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রবৃদ্ধির হার দ্বিগুণ হয়েছে। এ হার ছিল ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছর ছিল চার দশমিক ৮৪ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছর কুটিরশিল্পে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ০১ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ অর্থবছর ছিল ১১ দশমিক ১২ শতাংশ।
সেবা খাতের মধ্যে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি খাতে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছর ছিল আট দশমিক ৪৬ শতাংশ। এছাড়া আর্থিক ও বিমা খাতের প্রবৃদ্ধি ২০২২-২৩ অর্থবছর দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক ৫৫ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছর ছিল পাঁচ দশমিক ৮৭ শতাংশ। পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা উভয় খাতেই উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি কমেছে গত অর্থবছর। এ দুই খাতে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় যথাক্রমে পাঁচ দশমিক ৫৩ শতাংশ ও সাত দশমিক ২২ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর এ দুই খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে সাত দশমিক ৮৭ শতাংশ ও ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
প্রান্তিকভিত্তিক বিশ্লেষণে বিবিএস দেখিয়েছে, গত অর্থবছর প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে আট দশমিক ৭৬ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তা কমে দাঁড়ায় সাত দশমিক ৪৭ শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল, যার হার দাঁড়ায় মাত্র দুই দশমিক ০৬ শতাংশ। তবে শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সে ধাক্কা কাটিয়ে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ছয় দশমিক ২৪ শতাংশে।
এদিকে চলতি অর্থবছর তথা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি আবারও কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ০৭ শতাংশ। এর মধ্যে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থির মূল্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে ছিল তিন দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছর প্রথম প্রান্তিকে কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল দুই দশমিক ০৭ শতাংশ।
চলতি অর্থবছর প্রথম প্রান্তিকে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে ছিল ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শিল্পে প্রবৃদ্ধির হার ছিল সাত দশমিক ১৭ শতাংশ। আর চলতি অর্থছর প্রথম প্রান্তিকে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল তিন দশমিক ৯৬ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে ছিল দুই দশমিক ৮৭ শতাংশ। যদিও গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
বিবিএসের হিসাবে, গত অর্থবছর শেষে মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৮৬৮ টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছর ছিল দুই লাখ ৩১ হাজার ৮৬১ টাকা। আর গত অর্থবছর শেষে মাথাপিছু জাতীয় আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭৩ হাজার ৩৬০ টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ছিল দুই লাখ ৪১ হাজার ৪৭ টাকা।
প্রসঙ্গত, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে চলতি বছর জানুয়ারিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কিছু ধীর হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কম থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
২০২২-২৩ অর্থবছর : জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়াল ৫.৭৮%
Leave a comment