খুলনাবাসীর অনেক দিনের চাওয়া আধুনিক শিল্পকলা একাডেমী ভবনটি অনেক অসম্পূর্ণতা রেখেই উদ্বোধন করার আয়োজন চলছে। সংস্কৃতি-কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাঁরা উদ্বোধনের আগেই কারিগরি অসম্পূর্ণতা দূর করার দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে এ দাবিতে একাধিক সংগঠনের পক্ষ হতে খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
বিভাগীয় শহর খুলনায় একটি শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা এই অঞ্চলের সংস্কৃতিকর্মীসহ আপামর মানুষের দীর্ঘদিনে চাওয়া ছিল। এর জন্য মিছিল-সমাবেশ, এমনকি হরতালও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৫ মার্চ খালিশপুরের প্রভাতী স্কুল মাঠের জনসভায় ঘোষণা দেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স নির্মাণ করার কথা ঘোষণা করেন। ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর নগরীর ৫৭/১ শেরেবাংলা রোডে খুলনা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি চারতলা প্রশাসনিক ভবন, ৫০০ আসনের মিলনায়তন, আর্ট গ্যালারি, মুক্তমঞ্চ নির্মাণের জন্য দরপত্র আহŸান করে গণপূর্ত বিভাগ। ওই বছরের ১০ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিসিটিএই ইলোরা জেভির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ব্যয় ধরা হয়েছিলো ১২ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কয়েক বার নকশা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতায় প্রকল্পের সময় বেড়ে যায় এবং ব্যায় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩০ কোটিতে। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, তবে শীতাতপ যন্ত্র স্থাপন, আলোক নিয়ন্ত্রণসহ কিছু কারিগরি বিষয়ে অসম্পূর্ণতা রয়েছে। উপরন্তু এই কমপ্লেক্স ভবনটি দেখাশোনা, রক্ষাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ খরচ প্রবৃতি কোথা হতে নির্বাহ হবে, তার সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। ফলে ভবনটি উদ্বোধন হওয়ার পর এর ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ব্যয় নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে। এতে শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স ভবনের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় আগামী ২১ অক্টোবর শিল্পকলা একাডেমি উদ্বোধনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। অবশ্য, খুলনা জেলা প্রশাসক জানিয়েছন, এখনই উদ্বোধন করা হচ্ছে না।
এদিকে, উদ্বোধনের আগে শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স-এর অসম্পূর্ণতা দূর করার দাবি জানানো হয়েছে। এই দাবিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও খুলনা সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কমিটি খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। এতে বলা হয়, উদ্বোধনের আগেই মূল মিলনায়তন ও আর্ট গ্যালারির আলোসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাসহ যেসব ত্রæটি রয়েছে, তা দূর করতে হবে। আধুনিক আলো ও শব্দ প্রক্ষেপণযন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে, তা পরিচালনার জন্যে দক্ষ জনবল নিয়োগের দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে একাডেমি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা যুক্ত ছিলেন, তাঁরাসহ সকল স্তরের সংস্কৃতি কর্মীরা যাতে উপস্থিত থাকতে পারে, এমন একটা সময়ে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে কমপ্লেক্স ভবনটি উদ্বোধনের দাবি জানানো হয়।
শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স ভবনের অসম্পূর্ণতা প্রসঙ্গে সংস্কৃতিকর্মী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি হুমায়ুন কবির ববি জানান, হলের মধ্যে যেসব আলোকবাতি লাগানো হয়েছে সেগুলোর মান যথাযথ নয়। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো নাটক করার জন্য সে সকল জোন থাকার কথা সেগুলো অবর্তমান। এছাড়া যেসব আলোকবাতি লাগানো হয়েছে সেগুলো চালানোর মতো টেকনিশিয়ান খুলনায় নেই। অপরদিকে গ্রীনরুমে ও লাইটরুমের সাথে শব্দযন্ত্রের কোন সংযোগ নেই। মূল স্টেজের যে ব্যাক স্ক্রিণটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটির রং দেওয়া হয়েছে সবুজ, যা মোটেই নাটকের জন্য উপযোগী নয়।
এ বিষয়ে খুলনা সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কমিটির আহবায়ক স্বপন কুমার গুহ বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল খুলনায় একটি আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স গড় উঠুক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সেই দাবি পূরণ করেছেন। এখন আমাদের আর একটি দাবি হচ্ছে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী; সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী, খুলনা সিটি মেয়র ও স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সকলকে সাথে নিয়ে এটির উদ্বোধন করবেন। এর ফলে এতদাঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মকাÐ আগামীতে গতিশীলতা পাবে।
শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য মকবুল হোসেন মিন্টু বলেন, শিল্পকলা একাডেমি ভবন কমপ্লেক্স-এর ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। যে ত্রæটির কথা বলা হচ্ছে, তা যদি সত্যি থাকে তা ঠিক হয়ে যাবে। ব্যবহারের শুধু আগেই নয় পরেও অনেক ত্রæটি আমাদের কাছে ধরা পড়তে পারে। সে কারণে এটি আগে চালু হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
জানতে চাইলে শিল্পকলা একাডেমির আহবায়ক ও খুলনা জেলা প্রসাশক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, আমরা স্মারকলিপির কপিটি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল দল সেটি যাচাই বাছাই করার পরই অভিযোগগুলোর সত্যতা বোঝা যাবে এবং তারপর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন আগামী ২১ তারিখে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করার কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে এটির উদ্বোধন করানোর চেষ্টা করছি।