খান আ: জব্বার, শিবলী
রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা নেই বললেই চলে। রূপসা উপজেলা হাসপাতালে ডাক্তারদের নিয়োগ দিলেও তারা কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে শহরের হাসপাতালে প্রেষণে দায়িত্ব নিয়ে হর-হামেশা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে রুগী দেখেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া ১৪৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে পদ শূন্য রয়েছে ৫৭ জনের। ডাক্তার, কর্মকর্তা, কর্মচারী সংকটসহ নানাবিধ কারণে ভেঙ্গে পড়েছে রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা খাত। যে সকল ডাক্টাররা নিয়মিত রুগী দেখছেন, হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের। ২৮ জনের কাজ করতে হচ্ছে মাত্র ৫ জনকে।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এক্স-রে মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন এবং ল্যাবের কাজ বন্ধ থাকায় রুগীদের খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলায় গিয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে রিপোর্ট করাতে হয়। হাসপাতালের ইনডোরের বাথরুমের অবস্থা শোচনীয়, ৫ জন সাফাই কর্মীর স্থলে মাত্র ১ জন সাফাই কর্মী কাজ করছে। যে কারণে হাসপাতালের বাথরুম থেকে শুরু করে বেডরুম পর্যন্ত অপরিচ্ছন্ন পড়ে আছে। তাছাড়া মাথাপিছু প্রত্যেক রুগীর জন্য ১২৫ টাকা হারে খাবার সরবরাহ করার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও ভ্যাট, আয়কর কেটে নেওয়ার পর ১১৩ টাকা অবশিষ্ট থাকে। সরকারি নিয়মে প্রতিকেজি চাউল ২৫ টাকা, প্রতিপিস ডিম ৫ টাকা ৫০ পয়সা, প্রতি কেজি মাছ ৮০ টাকা ধার্য থাকলেও বাজারে প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য ৪/৫ গুণ বেশী। পূর্বের এই রেটে রুগীদের খাবার প্রদানে হিমসিম খেতে হচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। তেমনিভাবে সুপেয় পানি সংকট চরমে। অপরদিকে ২৮ জন ডাক্তারের স্থলে মাত্র ৫ জন ডাক্তার হাজার হাজার রুগীদের সেবাদান করছেন। এছাড়া কর্মকর্তা এবং কর্মচারী ১৪৯ জনের ৫৭ টি পদ শূন্য। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অধিদপ্তর থেকে প্রেষণে আশা ৪২তম বিসিএসের ১১ জন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ফেব্রæয়ারি মাসে যোগদান করায় কিছুটা সেবা পাচ্ছেন সাধারণ রুগীরা। ১২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মস্থলে নেই একজনও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮ জন ডাক্তারের স্থলে ২৩টি শূন্য পদ রয়েছে।
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, যে ৫ জন ডাক্তার বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন এর মধ্যে অতি সমপ্রতি আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. উজ্জল কুমার পাল এবং ডা. সরফুদ্দিন আহম্মেদ এফসিপিএস করার জন্য খুলনায় প্রশিক্ষণে যুক্ত হয়েছেন। এক্ষেত্রে রুগী দেখবেন মাত্র ৩ জন ডাক্তার এবং ৪২ তম বিসিএসের প্রেষণে আশা অনভিজ্ঞ নতুন ১১ জনে। দন্ত বিভাগে সার্জন থাকলেও টেকনিশিয়ান না থাকায় দিন দিন দন্ত বিভাগের দামী বেডসহ টুলস গুলো প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। ইউনিয়ন পর্যায়ে ১ জন করে মোট ৫ জন সহকারী সার্জনের পদ শূন্য থাকলেও সহকারী সার্জন ডা. সাকির হোসেন-২৫০ শয্যা হাসপাতালে, ডা. শায়লা নাহিদ লাভলী সংক্রামণব্যাধি হাসপাতালে, ডা. আয়শা আক্তার নিপা, কোভিড-১৯ হাসপাতালে এবং ডা. সুমিত পাল কোভিড-১৯ হাসপাতালে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন। মো: আহসানুস সোহাইব (মে: টে: ল্যাব), ডেন্টাল বিভাগের মো: কামরুল হক (মে: টে:) এবং নৈশ প্রহরী মো: লিয়াকত আলী মোল্লা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রেষণে ডিউটি করছেন। উক্ত ডাক্তার এবং কর্মকর্তারা সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি খুলনায় বসবাস করে বিভিন্ন ক্লিনিকে দায়িত্বে আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তাছাড়া চতুর্থ শ্রেণির আউটসোর্সিং কর্মচারী ছিল ১১ জন। যারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক বছরের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসাবে কাজ করে আসছিল। দীর্ঘদিন হলো তাদের ও বাদ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের সেবা প্রসংগে একজন রুগী খাদিজা পারভীনের নিকট জানতে ছাইলে তিনি বলেন, সাধারণ সর্দি কাশির রুগী হলে এখানে চিকিৎসা করে বড় ধরনের অসুস্থ কোন রুগী ভর্তি হলেই রেফার্ড করে দেয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের অপারেশন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সফিকুল ইসলাম বলেন রুগী দেখতেই ডাক্তারদের হিমসিম খেতে হয়। এ কারণে জনবলের অভাবে ২০১৭ সাল থেকে হাসপাতালে অপারেশন বন্ধ আছে।
তিনি এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদীর সহযোগিতা কামনা করেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নানাবিধ সমস্যার বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাক্তার সুজাত আহম্মেদ খুলনার নিকট জানার জন্য ০১৭৮৯-৩৫৬৪৮৪ নাম্বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি রিসিভ করেননি।
৫ ডাক্তার দিয়ে চলছে রূপসা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
Leave a comment