জন্মভূমি ডেস্ক : ভারতে রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার সাথে সাথেই দেশের বাজারে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ক্রেতা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রশাসনের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে অস্বস্তি। শুক্রবার থেকে হু হু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম।
শনিবার একলাফে তা দ্বিগুণ হয়ে দুইশ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে তিনদিন গড়াতেই দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের ক্রেতা নেই। বাড়তি দাম হেঁকে অস্বস্তিতে আড়তদাররা। কোনো কোনো আড়তে আমদানি করা চায়না পেঁয়াজ পচতে শুরু করেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে দেশে দাম বাড়লেও পুরোদমে দেশি পেঁয়াজ বাজারে এলে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে ছোট আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের বক্তব্য, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পেঁয়াজ উৎপাদনের ভুল তথ্যে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। সঠিক তথ্য থাকলে অস্থিরতাও থাকতো না, সংকটও তৈরি হতো না।
ব্যবসায়ী সমিতি বলছে, দুদিন বাড়তি থাকলেও এখন খাতুনগঞ্জে ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। দামেও ধস নেমেছে। চায়না পেঁয়াজে পচন ধরেছে। পাশাপাশি এখন এ মৌসুমের দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। কয়েকদিনের মধ্যে পুরোদমে দেশি পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এখানে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একমাসজুড়ে ভারতীয় নাসিক জাতের প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারিতে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, যা খুচরা দোকানে ছিল ১১০ থেকে ১৩০ টাকা।
মধ্যম চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ-রসুনের আড়তদার ব্যবসায়ী মেসার্স বশর অ্যান্ড সন্স’র স্বত্বাধিকারী আবুল বশর বলেন, পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। একেক সময় একেক সিদ্ধান্তের কারণে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়। মূলত ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার খবরে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এতে ভোক্তারা বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ কেনায় হঠাৎ করে দাম বেড়েছে। এখানে ব্যবসায়ীদের কোনো কারসাজি নেই।
তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে এলসি (ঋণপত্র) সংকটে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির প্রবাহ কম ছিল। যে কারণে দেশের কোথাও পেঁয়াজের মজুত ছিল না। এতে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসার পরদিনই তা দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে চলে যায়। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জেও আসে। আসার সঙ্গে সঙ্গেই এসব পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে যেত। তাছাড়া রপ্তানি বন্ধের আগেও ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে টনপ্রতি ৮শ ডলার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। ভারতীয় স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কম থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে বেশি ডলার ব্যয় করে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়েছে। যে কারণে দেশের বাজারে একশ টাকার নিচে নামেনি।
এ ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ছোট ছোট কিছু চালান ভারত, চায়না থেকে আমদানি করি। কিন্তু পত্রিকায় খবর এসেছে ৫২ হাজার টন পেঁয়াজ আসছে। আমাদের কাছে যে খবর, তাতেও এর কোনো সত্যতা নেই। তারপরেও আমরা এখন এলসি করতে ভয় পাচ্ছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাক্তাইয়ের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমি বর্ডার থেকে রোববার এক ট্রাক পেঁয়াজ এনেছি। এ পেঁয়াজ আজ বাজারে ঢোকার কথা। কিন্তু প্রশাসনের চাপের কারণে ওই ট্রাক কুমিল্লায় দাঁড় করিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছি। কারণ এসব পেঁয়াজ ১৯০ টাকা কেনা পড়েছে। চাক্তাইয়ে এনে তো আমি প্রশাসনের জরিমানা গুনতে পারবো না। অথচ বর্ডারের সাপ্লাইয়ার এ পেঁয়াজ ফেরতও নিচ্ছে না। এই ১৬ টন পেঁয়াজ নিয়ে আমি বেকায়দায় আছি।