জন্মভূমি রিপোর্ট
খুলনার মডার্ণ সী ফুডের সাবেক কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার সাহা হত্যা মামলায় তৃতীয় দফা চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। রহস্যজনক কারণে দু’বারই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত শিল্পপতির ছেলে ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মেহেদী হাসান স্টারলিং’র নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তবে, পিবিআই কর্তৃক আদালতে দাখিলকৃত সর্বশেষ সম্পূরক চার্জশীটে স্টারলিং’র নাম যুক্ত হওয়ায় ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
গত ২ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আমিনুল ইসলাম খুলনা সিএমএম ম্যাজিস্ট্রেট আমলী অঞ্চল ক এর আদালতে এ চার্জশীট দাখিল করেন। চার্জশীটে মডার্ণ সী ফুডের পরিচালক মেহেদী হাসান স্টারলিংসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
পিবিআই কর্তক দাখিলকৃত সম্পূরক চার্জশীটে অভিযুক্তরা হচ্ছে- মর্ডাণ সী ফুডের ডিরেক্টর মেহেদী হাসান স্টারলিং, মোঃ আরিফুল হক সজল, মোঃ ডালিম শিকদার ওরফে আমির শিকদার ওরফে ডাললিম, সজল মোল্লা, কাউসার আলী, জাহিদ হাসান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে সুমন, মোঃ হাসিবুজ্জামান রনি ওরফে রনি হাওলাদার ও সজল গাজীকে। তবে, হত্যা পরিকল্পনাকারী মেহেদী হাসান স্টারলিংয়ের বন্ধু মেহেদী হাসান মামুনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ভিকটিম উজ্জ্বল কুমার সাহা মডার্ণ সী ফুডের ফিন্যান্স শাখায় কর্মরত ছিলেন। চাকরীর সুবাদে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মেহেদী হাসান স্টারলিংয়ের পিতা শিল্পপতি রেজাউল হক ও স্ত্রীর সাথে তার ভাল সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময়ে তিনি মেহেদী হাসান সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তাদের কাছে সরবরাহ করতেন। এ নিয়ে সন্দেহের এক পর্যায়ে অর্থ আত্মসাতের দায়ে চাকরিচ্যুত করা হয় উজ্জ্বল কুমার সাহাকে।
এরপরও ডিরেক্টর মেহেদী হাসান স্টারলিং বিভিন্ন বিষয়ে উজ্জ্বল কুমার সাহাকে সন্দেহ করতেন। এক পর্যায়ে মেহেদী হাসান তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১২ সালের ৭ জুন সকাল পৌনে ১০ টায় পূর্ব পরিচিত সন্ত্রাসী দিয়ে ভিকটিমের মেয়ের স্কুলে সামনে তার উপর হামলা চালানো হয়। মারাত্মক আহত অবস্থায় উজ্জল কুমারকে প্রথমে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ওই ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সুমন কুমার সাহা বাদি হয়ে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা থানার এস আই মোঃ সোহেল রানা মডার্ণ সী ফুডের ডিরেক্টর মেহেদী হাসান স্টারলিংসহ সকল আসামিকে আটক করেন। এর মধ্যে আসামি মামুনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সহ সকল আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এ মামলা থেকে মূল পরিকল্পনাকারী মেহেদী হাসান স্টারলিং ও তার বন্ধু মেহেদী হাসান মামুনের নাম বাদ রেখে ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই ৮ জনের নামে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার সিআইডি’র ওপর ন্যাস্ত করা হয়। সিআইডি’র পরিদর্শক শেখ শাহাজাহানও তদন্ত শেষে একই বছরের ১২ অক্টোবর প্রধান আসামি মেহেদি হাসান স্টারলিং ও তার বন্ধু মেহেদী হাসান মামুনকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর খুলনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের আদেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেয়া হয়। পিবিআই’র হেডকোয়ার্টারের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আমিনুল ইসলাম ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি মামলার কেস স্টোরি স্ট্যাডি করেন। সেখানে তিনি মর্ডাণ সী ফুডের পরিচালক মেহেদী হাসান স্টারলিংয়ের অনৈতিক কার্যকলাপের কথা পরিবারকে বলার কারণে উজ্জ্বল কুমার সাহাকে পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা হয় মর্মে পর্যবেক্ষণ করেন। ফলে মূল রিকল্পনাকরী মেহেদী হাসান স্টারলিংকে কিভাবে এ মামলার দায় থেকে পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তারা বাদ দিলেন তা তার বোধগম্য নয় বলে সম্পূরক চার্জশীটে উল্লেখ করেছেন তিনি।
মামলার বাদী সুমন কুমার সাহা পিন্টু জানান, মূল পরিকল্পনাকারীকে দু’বার চার্জশীট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এবার যেন তিনি রেহাই না পান। তিনি এই হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
নিহতের বাবা মৃণাল কান্তি সাহা বলেন, মৃত্যুর আগে উজ্জ্বল আমাকে প্রায়ই বলত কোম্পানীর এমডির ছেলে আমাকে শুধু সন্দেহ করে। তিনি ছেলেকে সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে চলে আসে। তাদের সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার পরও এমন ঘটনাটি কেন ঘটালো তা তার বোধগম্য নয়।
নিহতের স্ত্রী শিমু রায় তার স্বামী হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারীকে সম্পূরক চার্জশীটে অন্তর্ভূক্ত করায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। এখন শুধু ন্যায় বিচার দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
খুলনার মডার্ণ সী ফুডের কর্মকর্তা উজ্জ্বল হত্যা তৃতীয় চার্জশীট
Leave a comment