জন্মভূমি রিপোর্ট : সারা দেশের ন্যায় দিঘলিয়ায় প্রচন্ড তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। প্রতিনিয়ত জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। চিকিৎসকগণ প্রচন্ড তাপদাহের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি, খাবার স্যালাইন ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার এবং ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।
জানা যায়, প্রচন্ড তাপদাহ থেকে একটু প্রশান্তির পেতে মানুষ ছুটছে গাছের সুশীতল ছায়া কিংবা শীতল কোন জায়গায়। এদিকে প্রচন্ড গরমের কারণে বাড়ছে জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব। হাসপাতালে বাড়ছে নানা রোগীর সংখ্যা। গত কয়েকদিন ধরে দক্ষিণের লবণাক্ত আবহাওয়ায় বয়ে চলেছে তীব্র তাপপ্রবাহ। ভ্যাপসা গরমে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে কর্মজীবী লোকেরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথেই সূর্য্যের তাপ বাড়তে থাকে। রাতে বা দিনের তাপমাত্রার কোন পরিবর্তন না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কয়েকদিনের তীব্র তাপদাহ ও ভ্যাপসা গরমে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহিঃবিভাগে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
মেডিকেল অফিসারের কক্ষের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখে বোঝা যায় প্রচন্ড গরমে রোগীরা কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে। মাত্র দুইজন মেডিকেল অফিসারের পক্ষে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশীম খেতে হচ্ছে।
দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাস কষ্ট জনিত কারণে অন্যান্য সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে। সাধ্যমত সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকগণ। চিকিৎসার পাশাপাশি তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার পাশাপাশি পানি, স্যালাইন ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন জরুরী বিভাগের চিকিৎসা প্রদানকারী মেডিকেল অফিসার।
দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাহবুবুল আলম জানান, বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য এ উপজেলার চিকিৎসকগণ সার্বক্ষণিক আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমান চিকিৎসক সংকট রয়েছে। সব সময় চিকিৎসকরা মফঃস্বলে থাকতে চায় না। বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে চাকুরির কয়েকদিনের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার জন্য জেলা শহরের হাসপাতাল অথবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলী বা ডেপুটেশনে চলে যান। আর এ কারণে চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে চিকিৎসক সংকট হলেও সেবার মান ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে ।
তিনি আরো জানান, গতকাল ২৫ এপ্রিল অন্তঃ বিভাগে রোগী ভর্তি হয় ২৭ জন। যাদের মধ্যে ডায়রিয়া রোগী ৩ জন, শিশু রোগী ১ জন , জ্বরের রোগী ৭ জন সহ অন্যান্য রুগী। বহিঃবিভাগে এ দিন চিকিৎসা নেয় ৩৭২ জন। ১ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দিঘলিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করে ৫২৭২ জন। শিশু রোগী সেবা নেয় ৮০২ জন, ডায়রিয়া ১০২ জন। চিকিৎসকেরা সময়ের খবরকে বলেন রোগীর সংখ্যা বেশি, আমাদের রোগীদের দেখভালে খুবই সমস্যা হচ্ছে। তারপরও দেখতে হচ্ছে।
অপরদিকে পুরানো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে দ্বিতীয় তলার কক্ষগুলোতে রোগী রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম, রিজিয়া বেগম, রিতা বালা, রোজিনা বলেন হাসপাতালে প্রচুর পরিমাণে রুগীর চাপ থাকলেও ডাক্তার স্বল্পতার কারণে ডাঃ মোঃ মাহবুবুল আলম নিজেই রোগীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। জরুরী রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিজেই দিচ্ছেন।
দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটের ব্যাপারে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতা দায়ী। হাসপাতাল চালুর পূর্বে পূর্ণাঙ্গ সেটআপ তৈরি করা প্রয়োজন। চিকিৎসক ও লোকবল সংকট রেখে চিকিৎসা সেবা চালু করে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ গুলিকে সঠিক চিকিৎসা সেবা না দেওয়া তাদের সাথে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে প্রতারণার শামিল। গ্রাম বাংলার কর্মমুখী মানুষের সাস্থ্য সেবা ঠিক ও চলমান রাখার জন্য মফঃস্বলের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিজ্ঞ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও লোকবল নিয়োগের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগী সহ সমাজের বিবেকবান মানুষেরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাহবুবুল আলম জানান, অচিরেই এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল সমস্যা দূর হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন ।উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মাসুম বিল্লাহ বলেন, চিকিৎসা সেবা যাতে কোনভাবে ব্যাহত না হয় সে জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও প,প কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদ্বোধন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।