জন্মভূমি রিপোর্ট
নগরীর খালিশপুর থানার ১১ নং ওয়ার্ডের ঝিলসিড়ি নামের একটি বাড়ী হতে লাবনি বিশ^াস চান্দা (৩৬) নামে এক গৃহবধুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছে। মরদেহের দু’টি স্থানে সামান্য জখমের চিহ্ন রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মরদেহ উদ্ধারের সময় পুলিশ নিহতের স্বামী চার্লস বিশ^াস (৫০) এবং তার ভাই আলফ্রেড বিশ^াস (৫১) কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। গত রাত ৯ টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে থানায় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল।
পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া সিসি ফুটেজে ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে ওই নারীর গলায় ফাঁস দেয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে। সূত্রমতে, ভিডিও ফুটেজে গৃহবধূ চান্দাকে ফাঁস নেয়ার আগে ফজরের নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। এই আত্মহত্যার পেছনে কারো প্ররোচনা রয়েছে কিনা? তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খারিশপুরের লাল হাসপাতাল সংলগ্ন ২০ নাম্বার রোডের ৫ নং হোল্ডিংয়ে দ্বিতীয় স্বামী চার্লসের সাথে ভিকটিম চান্দা বসত করতেন। ওই বাড়ীর ড্রইং রুমের ফ্যানের সাথে ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্মহনন করেন। মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী উপ-পরিদর্শক মোঃ জাকিরুল ইসলাম বলেন, নারী পুলিশ সদস্যরা নিহতের স্বজনদের উপস্থিতিতে সুরতহাল কাজ সম্পন্ন করেন। লাশের ডান হাতের কব্জির নিচে এবং মুখে সামান্য জখমের চিহ্ন পাওয়া গেলেও অন্য কোথাও আঘাতের দাগ মেলেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছর আগে চান্দার প্রথম স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর তিন বছর পর তিনি চার্লসের সাথে সংসার পাতেন। দ্বিতীয় সংসারে তাদের দুইটি সন্তান জন্ম নেয়। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে কলহ-বিবাদ লেগে থাকত। প্রায়ই ওই নারীকে তার স্বামীর মারপিটের শিকার হতে হতো। বুধবার রাতে তাদের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটির শব্দ পান প্রতিবেশিরা। পরদিন সকালে তার মরদেহ উদ্ধার হয়।
এদিকে, নিহতের প্রথম প্রথম সংসারের বড় সন্তান রাব্বি সাংবাদিকদের বলেছেন- রাতে চার্লস যখন তার মাকে মারছিল, তখন ছোট ভাই নয়ন থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে তা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হলে তাকে থানা হতে বের করে দেয়া হয়। তাদের মায়ের মৃত্যুর পর থানায় বার-বার ধর্না দেয়া হলে পুলিশের অশোভন আচরণের শিকার হতে হয়।
যদিও খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ জাহাঙ্গীর বলছেন, রাতে একজন অভিযোগ জানাতে থানায় আসলেও তিনি ভিকটিমের ঠিকানা বলতে পারেন নি। এরপর তিনি মোবাইলে টাকা রিচার্জ করার কথা বলে বেরিয়ে যান, আর ফেরেননি। সকালে নিহতের আগের সংসারের কোনো সন্তানই থানায় আসেননি।
(ওসি) দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই অপমৃত্যু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আটক দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
অন্যদিকে, থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) নিমাই চন্দ্র কুন্ডু বলেছেন, ঘটনাস্থল হতে একটি চিরকুট (সুইসাইডাল নোট) ও আত্মহত্যার কাজে ব্যবহৃত ওড়নাটি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। চিরকুটটিকে বিশ্লেষন করা হচ্ছে।