অভিজিৎ পাল
নগরীতে বৈধ-অবৈধ ইজিবাইকে প্রতিদিনের বিদ্যুৎ এর চাহিদা সোয়া তিন লাখ ইউনিট। অতএব ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সরকারের যে সিদ্ধান্ত তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলছেন বৈধ ইজিবাইকের চালক, ইজিবাইক চার্জ সেন্টারের মালিক ও নাগরিক নেতৃবৃন্দরা।
একটি ইজিবাইকে প্রতিদিন চার্জ দিতে আট থেকে নয় ইউনিট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাড়ে আট হাজার ইজিবাইকের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন ৭৬ হাজার ৫০০ ইউনিট।
কিন্তু নগরীতে সাড়ে আট হাজার ইজিবাইকের স্থানে চলে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার ইজিবাইক। অতএব এই পরিমাণ ইজিবাইকের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে তিন লাখ ১৫ হাজার ইউনিট। এছাড়াও রয়েছে ইজি রিক্সা, মোটরচালিত ভ্যান যার কোন হিসাব নেই কারোর কাছে। অতএব ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছে সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দেখা দেবে সংশয়।
ইজিবাইক চালকরা বলছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নিবন্ধনহীন ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করতে হবে রাস্তায়। আর ইজিবাইক চার্জ পয়েন্ট মালিকদের দাবি অবৈধ ইজিবাইক যেমন বন্ধ করতে হবে তেমনি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগও বন্ধের দাবি জানান তারা।
নগরীর আলীর ক্লাবে অবস্থিত সিয়াম চার্জিং পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ১৫ থেকে ২০টি ইজিবাইকের চার্জ হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই ইজিবাইক আসছে চার্জ করতে আবার ইজিবাইক চার্জ শেষে নিয়ে যাচ্ছেন চালকেরা। এ সময় মো: ইলিয়াস বলেন, ইজিবাইকে প্রতিদিন ১০ ঘন্টা থেকে ১২ ঘন্টা চার্জ দিতে হয়। এতে আট থেকে নয় ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়।
সরকারের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নির্দেশনার কথা বলতেই, ইজিবাইক চালক মহিউদ্দিন বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশনকে টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাই। কিন্তু শহরে অবৈধ ইজিবাইক চলে বৈধ ইজিবাইকের থেকে তিন থেকে চার গুণ। খুলনায় বলা হয় সাড়ে আট হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স আছে। কিন্তু গাড়ি চলে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার। অবৈধ গাড়ি বন্ধ হলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে বলছেন তারা।
অপরদিকে ইজিবাইক চার্জিং সিয়াম পয়েন্টের ম্যানেজার মো: তারেক বলেন, ইজিবাইক চার্জিং পয়েন্টগুলোর মধ্যে অনেকেই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চার্জ দেন। বিদ্যুৎ বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় ও গোপনে এই কার্যক্রম চলছে। এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে।
নাগরিক নেতৃবৃন্দ বলছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও অজানা কারণে ইজিবাইক বন্ধ হচ্ছে না নগরী ও মহাসড়কে। প্রতিনিয়ত রাস্তার দুর্ঘটনা যেমন ঘটছে তেমনি তৈরি হচ্ছে জ্যাম। এখন তো রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট লাঘবে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই অবৈধ ইজিবাইক, রিক্সা, ইজিভ্যান বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে নগরীতে বিকল্প গণপরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিকল্প গণপরিবহনের ব্যবস্থা না করে ইজিবাইক বন্ধ করা সহজ হবে না বলছেনও তারা।