রিপনচন্দ্র মল্লিক, মাদারীপুর : ব্যথার ইনজেকশন পুশ করার পর ছটপট করতে থাকে রোগী। দেড়ঘন্টা অক্সিজেনের জন্য স্বজনদের আহাজারি। দায়িত্বরত নার্স ও ডাক্তারের অবহেলায় মারা যায় মেরুদন্ডে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হওয়া পান দোকানী শ্যামল দাস। মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালে এমন কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ স্বজন ও জনপ্রতিনিধিরা। অভিযুক্তের বিচার দাবি করেছেন তারা।
স্বজনদের অভিযোগ, মেরুদন্ডের ব্যথা নিয়ে রোববার বিকেলে ৫টার দিকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মাদারীপুর শহরের পুরানবাজারের পান বিক্রেতা ও মাদারীপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের আমিরাবাদ এলাকার রামজীবন দাসের ছেলে শ্যামল দাসকে (৫৫)। হাসপাতালের নিচতলার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রিয়াদ মাহমুদ চিকিৎসাপত্র দিয়ে ভবনের ছয়তলায় ভর্তি দেন রোগীকে। ভর্তি হলে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখে রোগীকে ব্যথার ওনজেনশন পুশ করেন কর্তব্যরত নার্স সুজাতা। পরে শুরু হয় শ^াসকষ্ট ও দাপাদাপি। অক্সিজেনের অভাবে সারা শরীরে ব্যথার যন্ত্রনায় ছটপট করতে থাকেন শ্যামল। এ সময় নার্সকে অক্সিজেনের কথা বললে, ব্যস্ততা দেখিয়ে অন্য কাজে মনযোগ দেন তিনি। এরপর রাত ৮টার দিকে মারা যান ওই ব্যবসায়ী। নার্সদের দায়িত্ব অবহেলায় পান বিক্রেতার মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে এই ঘটনার বিচার দাবি করেছেন স্বজন ও জনপ্রতিনিধি। বিষয়টি তদন্ত করে দোষির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জণ। এ ব্যাপারে আইনী পদক্ষেপের আশ^াস পুলিশের।
নিহত শ্যামল দাসের ফুফাতো ভাই গজেন দাস বলেন, আমার ভাইয়ের ১১ বছরের এক ছেলে ও ১৪ বছরের এক মেয়ে রয়েছে। এই সংসারটা এখন কিভাবে চলবে, এই ঘটনার সাথে জড়িত নার্সের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
শ্যামল দাসের ছোটভাই শংকর দাস অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হবার পর আমার ভাইকে ঠিকঠাক চিকিৎসা দেয়া হয়নি। তাই অল্পসময়ের মধ্যে আমার ভাই মারা গেছে। এই ঘটনার বিচার চাই।
মাদারীপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজিব মাহমুদ কাওসার বলেন, শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু হবে এটা মেনে নেয়া যায়। সরকারি হাসপাতালে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যে নার্স দায়িত্ব অবহেলা করেছে, তার বিচার ও হাসপাতাল থেকে অপসারণ চাচ্ছি।
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ও জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. মুনীর আহম্মেদ খান বলেন, হাসপাতাল থেকে মুঠোফোনে বিষয়টি কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে অবগত করেছে। ঘটনা কি ঘটেছে, সবকিছুই পর্যলোচনা করে নার্সের দোষ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম সালাউদ্দিন বলেন, হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হচ্ছে, এমন খবরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে পুলিশ। এ ব্যাপারে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে রাত ৮টার পর ডিউটি না থাকায় বাসায় চলে গেছেন অভিযুক্ত নার্স সুজাতা। এজন্য তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। যদিও চিকিৎসক ডা. রিয়াদ মাহমুদের দাবি, সঠিকভাবেই ভবনের নিচতলার জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হয় শ্যামল দাসকে। কিন্তু পরবর্তীতে ভবনের ছয়তলায় কি হয়েছে, সেটা সম্পর্কে তিনি অবগত নন।
মাদারীপুরে সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব অবহলোয় পান বিক্রেতার মৃত্যু
Leave a comment