ফকিরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের ফকিরহাটে মাছের ঘেরের আইলে সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। ইতিমধ্যে ঘেরের আইলে সবজি চাষ করে কৃষকরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। ঘেরে চিংড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাদা মাছের চাষ। আর সাদা মাছ চাষ হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে ঘেরের আইলে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ। ঘেরের আইলে সবজি আর নিচে পানিতে মাছ। ক্রমেই বাড়ছে এই চাষ পদ্ধতি। ফলে উপজেলায় সমন্বিত সবজি চাষে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে।
আর এর চাহিদাও রয়েছে দেশজুড়ে। ঘেরের আইলে সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় উপজেলার অধিকাংশ মাছের ঘেরে সবজির চাষাবাদ দিন দিন বাড়ছে। ফলে উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায়ও রপ্তানি হচ্ছে ফকিরহাটের সবজি।
নলধ-মৌভোগ ইউনিয়নে বিভিন্ন ঘেরে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ মৎস্য ঘেরগুলোতে যতদূর চোখ যায় সবুজের হাতছানি। মাছের ঘেরের আইলে বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁশ ও জাল দিয়ে ঝুলন্ত মাচা তৈরি করা হয়েছে। তারপর সবজির আবাদ করে বাড়ন্ত গাছ মাচার ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে জায়গা কম লাগে ও অল্প পরিচর্যায় ভালো ফসল পাওয়া যায়। দেখা গেছে, ঘেরের আইলের উপরে নির্মিত সারি সারি মাচায় ঝুলছে করলা, লাউ, কুমড়া, বরবটি, চিচিংগা, ধুন্দল আর শসা। আইলে উপরে রয়েছে ঢেঁড়শ, পুঁইশাক ও কলাগাছ। মাচায় ঝুলছে লাভজনক সমন্বিত সবজির ফসল।
কৃষক এম জাকির হোসেন বলেন, তিনি এবার দুই বিঘা ঘেরের পারে নানা প্রকারের সবজি চাষ করেছেন। স্বল্প খরবে ভাল উৎপাদন হওয়ায় তিনি লাভবান হবেন। কৃষি বিভাগ তাকে নানা পরামর্শ, প্রশিক্ষন ও এই কৃষি কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।
কামটা গ্রামের কৃষক জাকিরের মত ওই এলাকায় ঘেরের পারে সবজি চাষ করে লাভবান হয়েছেন কৃষক শীবপদ রায়, বিপ্লব তরফদার, অসিত বিশ্বাস, শিবানী তরফদার, উজ্জল রায়, রহিতাশ তরফদার, অনুজ মহলী, নিতুল রায়, সুকুমার তরফদার, শিমুল হীরাসহ অনেকে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দাস জানান, নলধ-মৌভোগ ইউনিয়নে নির্ধারিত ২০টি স্থান থেকে সপ্তাহের তিনদিন মন মন সবজি ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। এখানে প্রতি তিনদিন অন্তর শষা প্রায় ২১০০ মন, উচ্ছে ৩০০মন, করলা ১৫০, বরবটি সিম ২০মন চিচিংগা ২৫মন ও মিষ্টি কুমড়া, লাউ সহ অন্যান্য উৎপাদিত কৃষি পণ্যদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন এসব কৃষকদের কৃষি বিভাগ পরামর্শ, প্রশিক্ষনসহ বিভিন্ন সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন।
এদিকে ঘেরের আইলে সবজি চাষ পরিদর্শনে যান বাগেরহাট খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার, জেলা প্রশিকè কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাখাওয়াত হোসেন সহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। পরিদর্শনকালে তারা বলেন, সম্প্রতি বৃষ্টি, বন্যা ও নদীর পানির চাপে দেশের অনেক অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কৃষির চরম ক্ষতি হয়েছে। ঠিক সেই মুহুর্তে এসব অঞ্চলে ঘেরের আইলে সবজি চাষে ভাল উৎপাদন হওয়ায় মানুষের অনেক উপকার হবে।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, অত্র উপজেলায় মাছের ঘেরের আইলে বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করছেন কৃষকরা। এবার নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নে ঘেরের আইলে সবজি চাষ করছেন প্রায় ১২০০ কৃষক। এখন তাদের ‘অল্প পুঁজিতে অনেক লাভের ফলে উৎসাহিত হয়ে এখন সমন্বিত এই চাষের দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। এসব কৃষকদের এসএসিপির আওতায় প্রশিক্ষনের পাশাপাশি নানা ধরনের পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়াও কৃষকদের সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয়। সবজি উৎপাদনে উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী করছেন কৃষকরা। ফলে উপজেলা বর্তমানে ঘেরের আইলে সবজি চাষ অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠৈছে।