হুমায়ুন কবির, কুষ্টিয়া : “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি” আধ্যাত্মিক এ বানীকে সামনে নিয়ে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে শুরু হলো তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব। আধ্যাত্মিক জগতের মহাগুরু বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৩ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিশাল এই উৎসবের উদ্বোধন হবে। তবে তার আগেই মূলত লালন উৎসবের সূচনা হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই নিজেদেরকে খাঁটি করতে লালন ভক্ত, অনুসারীরা আখড়াবাড়িতে জড়ো হয়েছেন।
১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক লালন ফকিরের দেহত্যাগের পর থেকে এই দিনে তার ভক্তরা পরে লালন একাডেমি সাধুসঙ্গ করতেন। দিনে দিনে সেটিই এখন এই বিশাল লালন স্মরণোৎসবে রূপ নিয়েছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগীয়তায় এবারও তিনদিনের উৎসব শুরু হয়েছে। সন্ধ্যায় মূল মঞ্চের আলোচনা থেকে উৎসবের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি। চলবে ১৯ অক্টোবর রাত অবদি।
ইতোমধ্যেই দেশ বিদেশ থেকে লালন ভক্ত অনুসারীরা আখড়াবাড়িতে চলে এসেছেন। শুধু উৎসব করতে নয়, সহজ মানুষের সান্যিধ্যে নিজেকে জানা, অজানাকে জানা, আত্মার শুদ্ধি, সর্বপরি নিজেকে খাঁটি করে গড়ে তুলতে কয়েকদিন আগেই তারা এসে আখড়াবাড়িতে আসন গেড়ে বসেছেন।
লালন অনুসারী সুফিয়া ফকির বলেন, এখানে আসলেই লালনের সেই সহজ মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়। তার জন্যই বার বার আসা। এখানেই আসলেই যেন মনে একটা শান্তি পাই। যে শান্তি আর কোথাও পাই না। আজ মানুষে মানুষে যে হিংসা সেই হিংসা দূর করতে হলে আমাদের লালনের কাছে আসতে হবে।
লালন অনুসারী ও গবেষক হৃদয় শাহ ফকির বলেন, শুধু উৎসবী মনোভাব নয়, এখানে এসে যেন সহজ মানুষ হতে পারি, সেই জন্য উপ মহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক মহাগুরু লালনের জাতপাতহীন, মানব মুক্তির বানী ধারণ করাই মূল উদ্দেশ্য।
এদিকে, আখড়াবাড়ির ভেতরে খন্ড খন্ড সাধু আস্তানায় গানে গানে লালন দর্শনের প্রচার চলছে। আর তাতে মেতে উঠেছেন সবাই। এর ভেতর দিয়ে লালনের মানবতার মুক্তির বানী ছড়িয়ে পড়ছে। অন্যদিকে আখড়াবাড়ির বাইরে লালন একাডেমির মাঠে চলছে বাউল মেলা।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি এহেতেশাম রেজা বলেন, এই উৎসব নির্বিঘ্ন করতে স্থানীয় প্রশাসন থেকে কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদেশীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। সবদিক বিবেচনা করে যেন কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার, চেক পোষ্টের মাধ্যমে পুরো আখড়াবাড়ি এলাকা পোশাকে ও সাদা পোশাকির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরে রাখা হয়েছে।
লালনের আধ্যাত্মিক মানবমুক্তির বানীর মর্মকথা সবার অন্তরে ছড়িয়ে দিতে পারলেই সফল হবে এই উৎসব, এমনটিই মনে করেন লালন অনুসারীরা।