পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা : পাইকগাছায় ভাঙন কবলিত পাউবো’র দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে হরিঢালী, গদাইপুর ও রাড়ুলী’র জেলেপল্লী প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি’র ঘটনা ঘটেছে। পানি বৃদ্ধিতে কয়েকটি ভাঙন স্থানের দুর্বল ও নিচু বেড়িবাঁধ রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।
শনিবার দুপুরে প্রবল বৃষ্টি ও বঙ্গপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপে কপোতাক্ষ নদের অস্বাভাবিক জোয়ারে দীর্ঘদিনের কপোতাক্ষ নদের ভাঙন কবলিত ভগ্ন বেড়িবাঁধ ভেঙে পোল্ডারে হু-হু করে পানি ঢুকলে শতাধিক বাড়ী-ঘর ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে । রাতে পানি বৃদ্ধি’র আশংকায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ জন সহায় সম্পদ সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র। এ সময় সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্থরা সহায় সম্পদ রক্ষার্থে দিকবিদিক ছুটাছুটি করছে। উঠানের আঙিনায় নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুরা খেলা করছে। তারা জানে না রাতে ভাতের পরিবর্তে শুকনা খাবার খেতে হবে, ঘুমাতে হবে অন্যত্র।
এ অবস্থায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ইয়াসিন আলী, শংকর বিশ্বাস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে স্থানীয়দের বাঁধ মেরামতের কাজে এগিয়ে আসতে বলেন। খবর শোনামাত্রই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন হরিদাসকাটি, সোনাতনকাটি , মামুদকাটি ও বোয়ালিয়া মালোপাড়া ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত বাঁধ মেরামতের নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সাথে তারা এ কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসিকে সহযোগিতা কামনা করেছেন। এলাকাবাসির আশংকা জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন কবলিত হরিঢালীর মামুদকাটি সহ হাবিবনগর, দরগাহমহল,গদাইপুরের বোয়ালিয়া মালোপাড়া, গড়ইখালীর খুতখালী, লস্করের আলমতলা ও দেলুটির কালিনগরের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ মেরামত না করলে যে কোন মুহুর্তে অঘটন ঘটতে পারে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদের সমন্বয কমিটির মাসিক সভায় চলতি পূর্ণিমায় নদী ভাঙন তীব্র হয়ে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এ আশংকায় ইউপি চেয়ারম্যানরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বাঁধের কাজে জরুরি অর্থ বরাদ্দ দাবি করেন।
জানাগেছে, কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে রাড়ুলী’ ইউনিয়নের মালোপাড়ায় ৮ শ মি. বেড়িবাঁধ ও গদাইপুরের বোয়ালিয়া মালোপাড়ায় প্রায় ৩শ মি. হরিঢালী’র মামুদকাটিতে ৪শ ১০ মি., গড়ইখালীর খুতখালী প্রায় ২ শ মিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া হরিঢালীর হরিদাসকাটি , দরগাঁহমহল, হাবিবনগর ও কপিলমুনি’র আগরঘাটা এলাকায় ভাঙনে ক্ষয়-ক্ষতির ইতিহাস বহুদিনের। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় বাঁধ ভেঙে বহু ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে ঘুর্ণিঝড় সিঁডর, আইলা, আম্ফান ও ফণি’র প্রভাবে ভাঙন কবলিত বিভিন্ন স্থান থেকে ৬০ দশকের তৈরী ওয়াপদা’র বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট,ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। বহু পরিবার সহায়-সম্পদ হারিয়ে বাস্তচ্যুত হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। সরকার নদী শাসন ও ভাঙন রোধে বিভিন্ন সময়ে অর্থ বরাদ্দ করে বাঁধ সংস্কার করলেও তা স্থায়ী ও কার্যকর হয়নি। নানা অনিয়ম অভিযোগের কথা শোনা গেছে। তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সংস্কারে ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ দিলেও তার সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় এ দুরাবস্থা।
সর্বশেষ এখন ভাঙন আরোও তীব্র হয়েছে।
ভাঙনে সহায়-সম্বল হারা হরিঢালীর দরগাঁহ মহলের সৈয়দ হাবিবুর রহমান, আজিজুর মোড়ল, বাচা সরদার জানান, দীর্ঘদিনের কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। পরিকল্পিত টেকসই বাঁধ নির্মানের দাবি করেন রাড়ুলী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, গদাইপুরের শেখ জিয়াদুল ইসলাম, লস্করের কে এম,আরিফুজ্জামান তুহিন, গড়ইখালী’র আ. ছালাম কেরু, দেলুটি’র রিপন কুমার মন্ডল, সোলাদানা ইউপি চেয়ারম্যান আঃ মান্নান গাজী ও হরিঢালী ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান শংকর বিশ্বাস। চেয়ারম্যানরা আরোও বলেন, সরকার বিভিন্ন সময় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিলেও কেন টেকসই বাঁধ হয় না?
এ সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় শাখা প্রকৌশলী মোঃ রাজু হাওলাদার জানান, ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধে জিওব্যাগ, মাটি ও বস্তা প্লেছিং করে পোল্ডার রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরোও বলেন,সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে রাড়ুলীর মালোপাড়া ৩ কোটি টাকা ও বোয়ালিয়ায় ২৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এছাড়া খুতখালীতে ১৭০ মি. বিকল্প বাঁধ দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন এ দৈনিক জন্মভূমি এ প্রতিনিধি কে বলেন, নদী ভাঙনের অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে পাউবো’র উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা সহ আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।