বাগেরহাট অফিস : বাগেরহাটে মোল্লাহাটে কিশোর ভ্যান চালক সাব্বির শেখ (১৫) হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বাগেরহাট। হত্যার সাথে জড়ি একমাত্র আসামী হত্যার শিকার সাব্বিরের বন্ধু কিশোর গ্যারেজ মেকানিক মোঃ ফেরদৌস (১৭)কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। এ্যান্ডড্রয়েড ফোন ভিত্তিক ভার্চুয়াল গেম ফ্রী ফায়ার খেলার দ্বন্দে মোঃ ফেরদৌস তার বন্ধুকে হত্যা করেছে। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে পিবিআই বাগেরহাট কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেফতার মোঃ ফেরদৌস বাগেরহাট সদর থানার ডিংসাইপাড়া এলাকার মোঃ মনিরুল শেখের ছেলে। মোল্লাহাট উপজেলার ছোট কাচনা এলাকায় ভ্যান রিকশা ও সাইকেল মেরামতের গ্যারেজ রয়েছে তার।হত্যার শিকার সাব্বির শেখ খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার কুশলা গ্রামের শেখ বোরহানের ছেলে। সে তেরখাদা ও মোল্লাহাটের ছোট কাচনাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্যান চালাত।
পিবিআই বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুর রহমান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্যারেজ মেকানিক মোঃ ফেরদাউস ভ্যান চালক সাব্বির শেখকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে। প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া শেষে মোঃ ফেরদাউসকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
জিজ্ঞাসাবাদে মোঃ ফেরদাউস পিবিআইকে জানায়, হত্যার শিকার ভ্যান চালক সাব্বির শেখ ও গ্রেফতার গ্যারেজ মেকানিক মোঃ ফেরদাউস ভাল বন্ধু ছিল। তারা দুইজনে এক সাথে ফ্রী ফায়ার গেম খেলত। কোন একদিন ফেরদাউসের সাথে গেম খেলে হেরে যায় সাব্বির। তখন সাব্বির ফেরদাউসকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। মোঃ ফেরদাউস এই গালিগালাজের প্রতিশোধ হিসেবে সাব্বিরের ভ্যান বিক্রি করে দেওয়ার কথা চিন্তা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ০৯ জানুয়ারি পৌনে তিনটার সময় বায়জিদ নামের একটি শিশুরা মাধ্যমে মোঃ ফেরদৌস সাব্বিরকে ডেকে আনে আনেন। পরে নিজের গ্যারেজের পিছনে থাকা কক্ষের একটি খাটের উপর বসে দুইজন ফ্রি ফায়ার গেম খেলা শুরু করেন। গেম খেলার এক পর্যায়ে মোঃ ফেরদাউস পিছন থেকে একটি গামছা গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে সাব্বিরকে হত্যা করে। পরে খাটের পাশে সাব্বিরের মরদেহ কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখে ফেরদাউস। পরে মোঃ ফেরদাউস সাব্বিরের ভ্যানটি কেটে ভাঙ্গারি হিসেবে বিক্রি করে দেয়। ভ্যানের চারটি ব্যাটারিও স্থানীয় একটি দোকানে বিক্রি করে দেয়। ওই রাতেই গ্যারেজের পার্শ্ববর্তী শেখ ওবায়দুর রহমানের গোডাউনের নিচে সাব্বিরের মরদেহ ফেলে নারায়নগঞ্জ পালিয়ে যায় মোঃ ফেরদাউস।গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে বাগেরহাট পিবিআই, নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাও থানার মেঘনা ব্রীজ এলাকা থেকে মোঃ ফেরদাউসকে গ্রেফতার করে।
এর আগে নিখোঁজের দুই দিন পরে ১১ জানুয়ারি তেরখাদা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন সাব্বির শেখের বাবা শেখ বোরহান। ১৭ জানুয়ারি ছোট কাচনার শেখ ওবায়দুর রহমানের গোডাউনের নিচ থেকে শেখ সাব্বিরের পচা-গলা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সাব্বিরের বাবা পড়নের কাপড় দেখে মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে ২৩ জানুয়ারি তেরখাদা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন সাব্বিরের বাবা শেখ বোরহান। পরবর্তীতে মামলাটি পিবিআই তদন্ত শুরু করে। এক সপ্তাহের মধ্যে হত্যার রহস্য উ;ঘাটন ও হত্যাকারীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পিবিআই।