সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি নামে খ্যাত সুন্দরবন। সুন্দরবন একটি গতিশীল ও সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের আধার। এটি বঙ্গোপসাগরের কূল ঘিরে অবস্থিত। এর বড় অংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং কিছু অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত।
দেশের ২৫ শতাংশ জনগণ যেমন এই উপকূলে বসবাস করে তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতে জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশ অবদান রাখে এ অঞ্চল। বর্তমানে সুন্দরবন নানাভাবে হুমকির মুখে। প্রতিনিয়ত ধ্বংস করা হচ্ছে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে এর জীববৈচিত্র্য। কিন্তু বড় পরিতাপের বিষয়, সুন্দরবনের জাতীয় সম্পদ আজ ধ্বংস হচ্ছে কতিপয় অসাধু এবং বিবেকহীন মানুষের যোগসাজশে। যে বনের সঙ্গে একটি দেশ ও জাতির অস্তিত্বের সম্পর্ক, তা চোখের সামনে ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না।
প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উভয় কারণেই সুন্দরবন হুমকির মধ্যে পড়েছে। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা গুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন সুন্দরবনকে ‘বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসেবে তালিকাভুক্তির সুপারিশ করেছে। ইউনেস্কো বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের অবস্থান বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অনেক আগেই বিবৃতি দিয়েছে। সুন্দরবন ধ্বংসের প্রধান কারণ মানবসৃষ্ট। এর মধ্যে রয়েছে– বনদস্যুদের অপৎপরতা, অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোভী ব্যক্তিদের দুর্নীতি, সরকারের উদাসীন মনোভাব, প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল নিয়োগ না দেওয়া, বনে অগ্নিসংযোগ, বাঘ ও হরিণ শিকার, ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধন।
এ ছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে মিষ্টি পানি সরবরাহ হ্রাস পেয়ে বনে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন দশকে সুন্দরবন-সংলগ্ন কৃষি কার্যক্রমের ফলে ১৭ হাজার ১৭৯ হেক্টর বন ধ্বংস হয়েছে। চিংড়ি চাষ ধ্বংস করেছে আরও ৭ হাজার ৫৫৪ হেক্টর।
কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র (রামপাল), সিমেন্ট কারখানা, অন্যান্য শিল্প প্রকল্প, সুন্দরবন-সংলগ্ন দেড় শতাধিক কারখানা বিশ্বের বৃহত্তম এ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকে মারাত্মক বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এ বনাঞ্চল ঘূর্ণিঝড় ও সুনামির মতো দুর্যোগের বিরুদ্ধে সুন্দরবন তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলবে। একই সঙ্গে উপকূলবর্তী মানুষ হারাবে তাদের বাসস্থান।
এরই মধ্যে সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যাওয়া জমির কারণে ছয় হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি হুমকির মধ্যে রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার প্রান্তিক মানুষ।
ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সুন্দরবনের আশপাশের জেলেরা বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মাছ ধরছে। এতে মাছের ছোট পোনা মারা যাচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে জেলেরা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও অদূর ভবিষ্যতে সুন্দরবন-সংলগ্ন নদী ও খালগুলোতে মৎস্য সংকট দেখা দেবে। ইতোমধ্যে ১৫ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে।
সুন্দরবনকে যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও সংরক্ষণ করতে হবে।
বন্যপ্রাণীর প্রাচুর্যের ভিত্তিতে সুন্দরবনের যেসব জায়গা অপরাধপ্রবণ, সেখানে সিসিটিভি বসিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে।
সুন্দরবনকে আমরা মেরে ফেলছি?

Leave a comment